এস.কে.দোয়েল, পঞ্চগড় প্রতিনিধি।।
তেঁতুলিয়ায় স্বাধীনতার ৪৪ বছর অতিবাহিত হলেও গ্রাম পুলিশদের দিন বদল হয়নি। হয়নি কোন জাতীয়ভাবে বেতন ভাতার কোন পরিবর্তন। সরকার আসে যায়, সকলের ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও শুধু গ্রাম পুলিশদের হয়নি ভাগ্যের কোন পরিবর্তন। তাদের ভাগ্যতাই যেন ঘোলাজলে ডোবা। তারা পরিবার-পরিজনদের দিতে পারেন না তিনবেলা ভালো কোন খাবার, সন্তানদের দিতে পারে না ভাল কোন স্কুলে, এমনকি জামা-কাপড় ও চিকিৎসা। হয়নি তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি। তাই তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গ্রামপুলিশদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ও পরিশ্রম অন্যান্য সেক্টরের কর্মচারীদের চেয়ে অনেক বেশি হলেও পারিশ্রমিক মজুরী নামেমাত্র।
দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতির কারণে এদেশের গ্রাম পুলিশদের জীবনচিত্র বড়ই করুণ ও ভয়াবহ। তারা পারে না অন্য কোথাও শ্রম দিতে, পারে না এই পেশায় নিযুক্ত থেকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে। ফলে অভাব আর দারিদ্রতার সঙ্গে তাদের নিত্য বসবাস করতে হয়। সকাল থেকে সারাদিন এমনকি অনেক রাত পর্যন্ত চলে তাদের হুকুম পালনের পালা। মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, এমনকি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশ পালন করতে হয় এ গ্রাম পুলিশদের। তাছাড়াও পুলিশদের পাশাপাশি নৈশকালীন পাহাড়া দিতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদে শান্তিশৃংখলা রক্ষার বৃটিশ আমল হতে গ্রাম পুলিশ তথা চৌকিদার প্রথা প্রবর্তিত হলেও সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে সরকার অধ্যাদেশ কার্যাবলী ও চাকরি নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসছে। এই অধ্যাদেশের বলে গ্রাম পুলিশ বৎসরে একবার বিনামূল্যে ইউনিফর্ম, জুতা, মোজা, ছাতা, হারিকেন, টচলাইটসহ দ্রব্যমূল্য সামগ্রী সরকার থেকে সরবরাহ করা হয়।
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ৭ জন দফাদারসহ ৬৩ জন মহালদার রয়েছেন। দফাদার প্রতিমাসে ২ হাজার ১শ টাকা এবং মহালদাররা ১ হাজার ৯শ টাকা করে ভাতা পেয়ে থাকেন। সরকারি বেতনের সাথে ইউনিয়ন পরিষদ প্রদত্ত ১% বেতন ভাতা যৌথভাবে দিয়ে থাকেন। দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি, ইউনিয়নের কর আদায়, জন্ম-মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ, সপ্তাহ শেষে প্রতি সোমবার থানায় হাজিরা, পুলিশকে সহায়তা করা, আসামী সনাক্তকরণ, পুজা, পাবলিক পরীক্ষা ইত্যাদি কাজে গ্রাম পুলিশদের পুরো দায়িত্বপালন করতে হয়। এমনকি নাশকতার বিরুদ্ধে রাত্রিবেলা মহাসড়ক, পাড়া-মহল্লার মধ্যে পাহাড়া দিতে দেখা যায়। সরকারি এতোসব দায়িত্ব পালন করেও একজন লেবার শ্রমিকের মূল্যও দেওয়া হয়না এই অবহেলিত গ্রাম পুলিশদের। এমনকি তাদের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারেন না। অপরদিকে এই পেশায় সহিত জড়িত থাকার কারণে তাদের কন্যা সন্তানদের কোন সোশ্যাল পরিবেশে বিয়ে পর্যন্ত দিতে পারে না।
এ ব্যাপারে আজ সোমবার দুপুরে তেঁতুলিয়া মডেল থানার সামনে গ্রাম পুলিশদের হাজিরার সময় এই প্রতিবেদকের কাছে দফাদার গ্রাম পুলিশ কহিনুর, জসিম উদ্দিন, আব্দুল কাদের, মনসুর আলী, সেকান্দার আলী, কফিল উদ্দিন আবেগ প্লাবিত হয়ে কান্নায় বলেন, আমাদের সন্তানদের তিনবেলা তেমন পেটভরে খেতে দিতে পারি না। এমনকি পরিবার পরিজনদের জামা কাপড় দিতে পারেন না বলে জানান।
মহালদার গ্রাম পুলিশ আব্দুল জলিল, আকিমুল, আমজাদ হোসেন, তোফাজ্জল, জাহাঙ্গীর, বাবুল ও শাহাদৎ জানান-পাড়া মহল্লা এমনকি রাজপথে নাশকতার বিরুদ্ধে বিরামহীনভাবে দায়িত্বপালন করতে হয়। গ্রাম্য সালিসের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই সকল কারণে অনেক সময় খেতেও পারেন না বলে জানান। এতে মাঝে মধ্যে আবার রাতের বেলা পুলিশের সহযোগিতার জন্য আসামী ধরতে ডাকও আসে। তাই ভালো ঘুমও হয় না। তাদের অবজ্ঞা দৃষ্টিতে দেখা হয় বলে জানান।
এ ব্যাপারে পুলিশের এসআই বসন্ত রায় বলেন, গ্রাম পুলিশদের সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যে বেতন দেওয়া হয়, তা একজনেরই দিন অতিবাহিত হয় না। এতে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চলে কীভাবে? তিনি গ্রাম পুলিশদের চাকরি জাতীয়করণের জন্য সরকারের প্রতি বিনীতভাবে আবেদন জানান।
অপরদিকে তেঁতুলিয়া সদর ইউপির চেয়ারম্যান কাজী আনিসুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকার দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করে গেলেও গ্রাম পুলিশদের ভাগ্যে তেমন পরিবর্তন হয়নি এটি সত্য। তাই সরকারের সদয় দৃষ্টিসহ বেতন-ভাতা হিসেবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।