৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি, বাঙালি জাতির জীবনে এক বেদনাসিক্ত শোকের দিন। ২০০৯ সালের এই দিনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস ও মেধাবী কর্মকর্তা শহীদ হন। তৎকালীন বিডিআরের কতিপয় বিপথগামী সদস্য নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে তাদের হত্যা করে। এসব চৌকস ও মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ।
সকাল ৯ টা ২৭ মিনিট। ওই দিন দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে একদল বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিক ঢুকে পড়ে। এদের মধ্যে একজন বিডিআর মহাপরিচালকের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা। বিডিআরের বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে, তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পুরো পিলখানায় তখন এক ভীতিকর বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি হয়। এসময় বিদ্রোহীরা পিলখানার চারটি প্রবেশ গেট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশে-পাশের এলাকায় গুলি ছুঁড়তে থাকে। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়ে মেধাবী সেনা কর্মকর্তারা। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান হয়। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে।
এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা থেকে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের লাশ। লাশ আর পিলখানার ধ্বংসযজ্ঞ দেখে সারাদেশের মানুষ হতবাক হয়ে যায়।
৩৬ ঘণ্টার এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক, দু’জন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ জন বিডিআর সদস্য ও পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।
পিলখানায় এই বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়। শুরু হয় বিডিআর পুনর্গঠনের কাজ। বিডিআরের নাম, পোশাক, লোগো ও সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করা হয়। বিডিআর-এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরির্তন করা হয় বিদ্রোহের আইন।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে মহানগর তৃতীয় দায়রা জজ ড. আক্তারুজ্জামান পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ২৭৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ১১৯টি ফৌজদারি আপিল, ১৪১টি জেল আপিল ও ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য একটি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে।
খালাসপ্রাপ্ত ২৭৮ জনের মধ্যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিচারিক আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ৬৫৪ জন ও আসামিদের পক্ষে ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে ৫৩৮ জন তাদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী পেশ করেছেন।
এদিকে, পিলখানা ট্রাজেডির ষষ্ঠ বার্ষিকীর দিনটিকে শাহাদাত বার্ষিকী হিসেবে পালন করবে বিজিবি। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফেরাত কামনায় পিলখানাসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন হবে। বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।