৫২ রাজনীতি ডেস্ক।।
অবরুদ্ধ দশার অবসানের প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর নিজের কার্যালয়ে সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “অবরোধ কর্মসূচি চলছে, অবরোধ কর্মসূচি চলবে, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সংলাপে সরকারের সাড়া না পেয়ে অবরোধ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অন্য কোনো কর্মসূচির চিন্তা তার নেই।
রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান সংলাপের মধ্য দিয়ে করার আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ জানিয়েছে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
“দেশের চলমান সঙ্কট নিছক আইন শৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সঙ্কট। এর রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আবার আহ্বান জানাচ্ছি।”
দশম সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তির দিন গত ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের’ কর্মসূচি পালনে কার্যালয় থেকে বের হতে বাধা পেয়ে লাগাতার অবরোধ ডাকেন ২০ দলীয় নেত্রী খালেদা।
বিক্ষিপ্তভাবে গাড়ি পোড়ানো, বোমাবাজি ও ভাংচুরের মধ্যে চলা অবরোধে অগ্নিদগ্ধ হয়ে অন্তত ২০ জন সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।
এসব ঘটনার জন্য সরকার বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে দায়ী করে কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও খালেদা এজন্য ক্ষমতাসীন দলকেই দায়ী করেন।
“আমরা সারাদেশে শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিলাম। আমাদের কর্মসূচিকে দেশে-বিদেশে বিভ্রান্ত করার জন্য সরকার পরিকল্পিতভাবে নাশকতা চালাচ্ছে।”
“বাসে গানপাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করা আওয়ামী লীগেরই ইতিহাস। এখনও তারা এই কাজ করছে। এখনও তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা-নাশকতার ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমরা মানুষের জীবনের বিনিময়ে রাজনীতি করতে চাই না।”
৫ জানুয়ারি ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি কার্যালয়ে ঢোকার পর বের হওয়ার সময় পুলিশের বাধা পান খালেদা।
এরপর তার কার্যালয়ে তালা দিয়ে ভবন ঘিরে পুলিশের অবস্থানের পাশাপাশি সড়কে ১১টি বালুর ট্রাক রেখে দেওয়া হয়। গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৮৬ নম্বর সড়কে যান ও মানুষের চলাচলও আটকে দেয় পুলিশ।
এর মধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারও দেখা করতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিরাপত্তার ‘স্বার্থে’ এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
খালেদা জিয়া চাইলেই তার বাসায় যেতে পারেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী কার্যালয়ে থেকে ‘নাটক’ করছেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন সোমবার ভোররাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে পুলিশ ও ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়।
সোমবার দুপুরে কার্যালয়ের বাইরের চিত্র
এরপর বিকালে বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির নেতা আর এ গনি, জমিরউদ্দিন সরকার, মওদুদ আহমেদ, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আ স ম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান, মঈন খান ও সারোয়ারী রহমান ওই কার্যালয়ে ঢোকেন।
তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন খালেদা, যিনি ৫ জানুয়ারির পর সাংবাদিকদের আর দেখা দেননি।
খালেদা বলেন, “গত রাতে কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সরকার আমার কার্যালয় থেকে পুলিশের অবরোধ তুলে নিয়েছে। যদি তাই করে থাকে, তবে আমি একে স্বাগত জানাই।”
এখন কার্যালয় থেকে বের হবেন কি না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা আমার অফিস। আমার অফিসে কাজ আছে, আমি কাজ করব।
“সরকার যদি তা তুলে নিয়েই থাকে, তবে আমি বলব, যাতে আমার চলাফেরাই সহযোগিতা করা হয়। আমি যেখানে ইচ্ছা যাব।”
অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে সরকারই ‘বাধ্য’ করেছে দাবি করে ২০ দলের নেত্রী বলেন, “আমাকে অবরুদ্ধ করার আগে সারাদেশকে অবরুদ্ধ করা হয়েছিল, ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। অবরুদ্ধ অবস্থায় আমাদের ওপর নিষিদ্ধ পেপার স্প্রে ছোড়া হয়। কী অমানবিক নির্যাতন আমাদের ওপর চালানো হয়েছিল, তার বর্ণনা দিতে চাই না।”
দলের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, মিছিলে পুলিশের গুলির ঘটনাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, “নানা আলোচনার আহ্বান আমরা জানিয়ে আসছিলাম। তারা আমাদের আহ্বান তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দিয়ে নির্যাতনের পথ বেছে নেয়।”
সরকারকে দমন-পীড়ন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, “যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, তা স্বাভাবিক করুন। মানুষকে স্বস্তি ও শান্তি দিন।
“উসকানি, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের অপরাজনীতি বন্ধ করুন। জনগণের ভোট দেওয়ার যে অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, তা ফিরিয়ে দিন। অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিন।”
আর এই দাবি পূরণে দলীয় নেতা-কর্মীদের সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সকল প্রতিকূলতার মধ্যে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে আমি বিএনপিসহ ২০ দলের সকল নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই।”
সংবাদ সম্মেলন শেষ করে নেতাদের নিয়ে আবার কার্যালয়ের দোতলায় উঠে যান খালেদা জিয়া। গত ১৫ দিন ধরে দোতলার চেম্বারেই থাকছেন তিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আলম ডিউ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাও দলীয় নেত্রীর সঙ্গে ওই কার্যালয়ে রয়েছেন।