পঞ্চগড় প্রতিনিধি ।।
পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারি ও তেঁতুলিয়া এই তিনটি উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-১ আসন গঠিত। এই আসনের আওয়ামীলীগের মাত্র বিজয় হয়েছে দুই বার। কেন জয়লাভ করতে পারে না? আওয়ামীলীগের রাজপথের আন্দোলন দাবানল ছড়ানো দলীয় নেতাকর্মীকে তেমন একটা মূল্যায়ন না করার কারণে তৃণমূলে মাঠ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ত্যাগী নেতাকর্মীরা। আর শীর্ষনেতাদের সময় কাটছে নানা কোন্দলে। কোন্দল ঝড়ে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে পঞ্চগড় জেলাসহ তার অঙ্গ সংগঠনগুলো। কোন্দল কাটিয়ে উঠার চেষ্টা তেমন একটা চোখে পড়ে না। তেঁতুলিয়া উপজেলার তিন খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। দলটির অন্তর্দ্বন্ধের কারণে দূর হচ্ছে না বিভক্তি। গঠিত হচ্ছে না নতুন কোন কমিটিও। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে এ দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। পাশাপাশি নেতাকর্মীরা কেউ কারও কথা শুনছেন না। আর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি, মারামারি থেকে দলীয় কার্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এসবের মধ্য দিয়ে ভেঙ্গে পড়েছে দলটির চেইন অব কমান্ড।
গত ৫ জানুয়ারি/১৪ দশম জাতীয় নির্বাচনে এবং উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের চরমভাবে পরাজয় ঘটে। এতে জাতীয় সংসদের নির্বাচিত হোন জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক প্রধান এবং উপজেলা নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম শাহীন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া এবং জামাতে ইসলামের সেক্রেটারি ইকবাল হোসাইন। আওয়ামীলীগের ভাগ্যের ফলাফল জিরো জিরো। এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, দুই সদস্য বিশিষ্ট মেয়াদাত্তীর্ণ প্রতিনিধি দিয়ে মাত্র আওয়ামীলীগ চলে। এ ব্যাপারে উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল বাসেত তিনি জানান, শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ধারণ করে একজন সফল রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুল জব্বার। তিনি নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে আওয়ামীলীগের কল্যানে আজীবন কাজ করে গেছেন। তার পরিবার ও সন্তানসন্তুতির জন্য তেমন কিছু করে যাননি।
অবিশ্বাস, সন্দেহ, দ্বিধাদ্বন্ধে এ দলটির গতি আসছে না। জেলার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদিকা সাবেক মহিলা সংরক্ষিত-৩২৫ ফরিদা আখতার হীরা, জেলার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান এবং জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমান পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান এই তিন খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামীলীগের রাজনীতি। এছাড়াও রয়েছে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দুইটি করে কমিটি। এক পক্ষের সভাপতি হিসেবে বাংলাবান্ধার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নায়বুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, অপরপক্ষের সভাপতি ইয়াসিন আলী মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু আর বর্তমান জাসদের আহবায়ক নায়েব আলী। ফলে নেই সাংগঠনিক কার্যক্রম তৎপরতা। তাই অভ্যন্তরীন কোন্দল নানানমুখী সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগকে সাংগঠনিকভাবে উজ্জীবিত করতে সরকার পাড়া মহল্লায় নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের একখন্ডের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি প্রত্যেক ইউনিয়ন ও পাড়া মহল্লায় নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কথা জানালেও কখন, কোথায়, কিভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে এ বিষয়ে তেমন কোন তথ্য দিতে পারেননি।
এছাড়াও আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি জেড এম আসাদুজ্জামানকে আওয়ামীলীগের পাড়া-মহল্লায় নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, থানা পুলিশের কাছে নাশকতা প্রতিরোধের কমিটি তালিকা না পাওয়ার কথা জানান। এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা আলমগীর হোসেন, আব্দুল হাকিম, আব্দুল বাসেত, আব্দুস সালাম, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, মাসুদ করিম সিদ্দিকী, পরিমল সেন, হাফিজ, নজরুল ইসলাম, মোশারফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, জুলফিকার হোসেন জুয়েল যোগাযোগ করা হলে বলেন, এ উপজেলা জামাত এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের চাকরি হয়, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় কিন্তু আওয়ামীলীগের কর্মীদের চৌকিদারীও হয় না। তাছাড়া বিভিন্ন সময় সত্য প্রকাশ করলে আমাদের মিথ্যা মামলা জড়ানো, এমনকি শ্রমিক লীগের সভাপতি হাফিজ উদ্দিন, কৃষকলীগের সভাপতি নজরুল ইসলামকে প্রকাশ্যে দিন দুপুরে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। বর্তমানে নির্যাতিত শ্রমিকলীগের সভাপতি হাফিজ উদ্দিনের পাশে কেউ নেই। সে মরে গেলেও নাকি বেঁচে আছে কেউ কোনদিন খোঁজ নেয়নি। এইভাবে নেতাকর্মীদের দমনের চিত্র তুলে ধরেন