বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারা সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন হয়ে যাবার পর প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো লক্ষণ তাদের নেই। তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো নজির নেই। তাদের প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করে আন্দোলন স্থগিত করা ভুল ছিল।
আজ (শুক্রবার) বিকেলে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশে একটি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট চলছে। এ সংকটের স্রষ্টা আওয়ামী লীগ, আরও পরিষ্কার করে বললে শেখ হাসিনা। সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সুযোগই তারা রাখে নি। সংবিধানের যে পরিবর্তন আনা হয়েছে,তাতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে দশম নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে সরকার। গণপ্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তাই ক্ষমতায় থাকার নৈতিক কোন ভিত্তি বা অধিকার নেই।
খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে বলা হয়েছিল এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। নির্বাচনের পর সমঝোতার মাধ্যমে সংসদ ভেঙ্গে দেবেন বলে শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা রাখেন নি। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার কোনো নজির তাদের নেই।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা যে ভুল ছিল তা আমরা অচিরেই বুঝতে পারি। নির্বাচনের পর তারা সমঝোতায় না গিয়ে সারাদেশে যৌথবাহিনীর অভিযান চালিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছে, দমন নীতি চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এক বছর অপেক্ষা করেছি। বার বার সংলাপ সমঝোতার প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু তারা বরাবরের মতো সংলাপের পথ পরিহার করে, সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। অতীতের মতো এবারও তারা অস্ত্রের ভাষাই বেছে নিয়েছে। কেউ সংলাপের কথা বললেই তাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে।
৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারির আগেই সারাদেশে নজিরবিহীন অবস্থা তৈরি করে সরকার। আমাকে গুলশানের এই কার্যালয়ে বালু ও ময়লার ট্রাক দিয়ে আবরুদ্ধ করা হয়। সমাবেশে যেতে চাইলে পিপার স্প্রে ছোড়া হয়। এর বিরুদ্ধে লড়াই না করলে স্বাধীনতার চেতনা রক্ষা করা যাবে না।
সবাইকে কষ্ট স্বীকারের আহবান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আন্দোলনে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির কথা সবাই অবহিত। শুধু সরকারের কোনো বোধদয় নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকাই সবচেয়ে বড় কথা। তাই তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আন্দোলন চালিয়ে গেলে সফল হবেই। বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে একটু কষ্ট স্বীকার করে নিতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, জেল জুলুম, দমন পীড়নের মধ্যেও যারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন তাদের আমি সাধুবাদ জানাই। যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। ক্ষমতার পরিবর্তন হলে আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াবো। কোনো আত্মত্যাগ ও আন্দোলন বৃথা যায় নি। বাংলাদেশেও বৃথা যাবে না ইনশায়াল্লাহ।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আন্দোলনের পথেই সংকটের সমাধান আসবে। বয়সের এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে,ক্ষমতা আমার কাছে মুখ্য নয়। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই আমরা লড়াই করছি। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ লড়াই নয়। এ আন্দোলন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার, গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষের। তাই যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সবাইকে আন্দোলনে সক্রিয় হবার আহবান জানিয়ে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিষ্ক্রিয় আছেন তারা আন্দোলনে নেমে আসুন। সারাদেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলুন। আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে তুলুন জাতীয় ঐক্য।
সরকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বানচালে নানা বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়াচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা নাশকতাসহ নানা অপকৌশল নিয়েছে এ আন্দোলনকে বানচাল করতে। এ কাজে তারা প্রশাসনের দলীয় লোকজনকে ব্যবহার করছে। কিন্তু হিটলারের যেমন শেষ রক্ষা হয় নি, তেমনি বাংলাদেশের হিটলাদেরও শেষ রক্ষা হবে না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদসহ আটক নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, খুন গুম, হত্যা বন্ধ করতে হবে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। এসব ঘটনার তদন্তের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। সভা সমাবেশের সুযোগ দিতে হবে। মানুষকে কথা বলতে দিতে হবে। গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে দ্রুত সংলাপের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি