৫২ আন্তর্জতিক ডেস্ক ।।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আল সিসি শারমুশ শেইখে এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় বলেছেন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন বলে অনেকে মনে করছেন। প্রেসিডেন্ট সিসি দেশের পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করলেও সেদেশে এখনো রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মিশরে বাধ্যতামূলকভাবে চাকুরী থেকে অবসর এবং ৪১জন বিচারককে অপসারণ করা থেকে বোঝা যায়, প্রেসিডেন্ট সিসি সেদেশের বিচারবিভাগে ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান চালানোর চেষ্টা করছেন। এভাবে তিনি বিচারবিভাগকে সম্পূর্ণ নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেবল মাত্র প্রভাবশালী ইসলামপন্থী সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রতি সমর্থনের কারণেই ৪১ বিচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসি অপসারিতদেরকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মাতা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট সিসির এ পদক্ষেপ থেকে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রতি তার শত্রুতা ও বিদ্বেষের প্রমাণ পাওয়া যায়।
এর আগেই সিসির পরামর্শক্রমে মিশর সরকার ইখওয়ানুল মুসলিমিনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সারা দেশে তাদের সব অফিস বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। এমনকি ইসলামপন্থী এই দলটির সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে মিশর সরকার। সরকারের এ পদক্ষেপের পর সমগ্র মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। এমনকি ইখওয়ানের সাধারণ সমর্থক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে এবং তারা কেউই নিরাপদ নয়।
গত এক বছরে মিশরে হাজার হাজার ইখওয়ান সমর্থককে আটক করে তাদেরকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এমনকি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠার অভিযোগ এনে বহু নেতাকর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অথচ শুধুমাত্র রাজনৈতিক শত্রুতার জেরে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এমনকি ইখওয়ানের শীর্ষ দুই একজন নেতাকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা ফাঁসির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি ইখওয়ান সমর্থক সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েছে। কারণ সিসির মতে, ইখওয়ানের সাধারণ সমর্থকরাও বর্তমান সরকারের জন্য বিপদজনক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের মত বর্তমান প্রেসিডেন্ট আল সিসিও প্রশাসনের সব বিভাগ নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। আর এ লক্ষ্য নিয়ে তারা বিরোধী সব গ্রুপকে নির্মূল করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট আল সিসি গত কয়েক মাসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাগরিক সুবিধা সীমিত করে বেশ কিছু আইন চালু করার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসি নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে তিনি বিদেশি অর্থ সাহায্য সংগ্রহ ও বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে উন্নত করার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যতদিন পর্যন্ত মিশরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসবে ততদিন পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা কিংবা অর্থনৈতিক উন্নতির কোনো নিশ্চয়তা নেই। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন মহল থেকে মিশর সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদের সঙ্গে সরকারের বর্তমান কঠোর আচরণ ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।