পঞ্চগড় প্রতিনিধি ।।
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার হাটবাজারগুলোর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা গঠিত। নেই কোন সংস্কারের উদ্যোগ। এই সাতটি ইউনিয়নে রয়েছে প্রায় ৪০টি হাটবাজার। এ হাটবাজারগুলো থেকে প্রতি বছর সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় করলেও ওইসব হাটবাজারগুলো এরশাদ সরকার পরিবর্তন করলেও কিন্তু দীর্ঘ ২৫ বছরে উন্নয়নের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি।
সংস্কারের অভাবে পানি নিস্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় কাদা, পানি জমে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। উপজেলার বড় হাটবাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে পাগলীডাংগী, সিপাইপাড়া হাট, তিরনই হাট, রনচন্ডী হাট, তেঁতুলিয়া, কালান্দিগছ, মুহুরী হাট, শালবাহান হাট, বুড়াবুড়ি, শিলাইকুটি, ভজনপুর, মাগুরমারী, দেবনগর উল্লেখযোগ্য।
বেশ কয়েকটি হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব হাটবাজারের দু’একটিতে পানি নিস্কাশনের ড্রেন থাকলেও সেগুলোও অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় তা দিয়ে পানি নিস্কাশন হয় না। আবর্জনায় পরিপূর্ণ থাকায় তা থেকে সবসময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। নেই কোন সেনিটেশন ব্যবস্থায় প্রসাব-পায়খানার নির্দিষ্ট স্থান। ফলে পাবলিক টয়লেট না থাকায় এসব হাটবাজারগুলোর মধ্যে মশা-মাছি খাবারের দোকাগুলোতে রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে।
এসব হাটবাজারগুলোর অধিকাংশ বাজারেই নেই পানি নিস্কাশনের ড্রেন। ফলে খোদ বাজারের মধ্যেই বৃষ্টির পানি জমে থাকে। এতে করে ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের ভোগান্তির সীমা নেই। সংস্কারের অভাবে মাটি ও ময়লা আবর্জনায় হাটবাজারগুলো মুখ থুবরে পড়েছে। রনচন্ডী, শালবাহান হাট, তিরনই , পাগলীডাংগী হাটগুলোতে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় যত্রতত্র মলমূত্রের দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
এরশাদের নির্মিত হাটসেটগুলো ঝড়ে সরকারি টিনগুলো ভেঙ্গে পড়ে আছে। রনচন্ডী বণিক সমিতির সভাপতি আকবর আলী জানান, কোন দিন এক কোদাল মাটিও কাটা হয়নি। প্রসাব-পায়খানার ব্যবস্থা নেই। একমাত্র গ্রামীণ জনপদের খাদ্য দ্রব্য বিক্রি হাটশেডটি ভেঙ্গে পড়ে আছে। প্রায় কোটি টাকার মূল্যবানের সদর ইউনিয়নের পুরাতন বাজারটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হওয়ায় সেটি এখন পরিত্যক্ত বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। এদিকে এলাকার প্রভাবশালীদের ব্যক্তি মালিকানাধীন চৌরাস্তার বাজারটি।
হাটবাজার থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়ে থাকে ওইসব রাজস্ব আয় থেকে এক তৃতীয়াংশ হাটবাজার উন্নয়নের জন্য খরচ করার সরকারি নিয়ম থাকলেও এ ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নেই কোন উদ্যোগ। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে হাটবাজারগুলো ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠছে। প্রত্যেক হাটবাজারগুলের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরকারি হাট চান্দিনা লাইসেন্সের নীতিমালা থাকলেও ওই সকল হাটচান্দিনা লাইসেন্স গ্রহণ না করার কারণে সরকার ব্যাপকভাবে রাজস্ব হারাচ্ছে। এতে করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিকট হতে শালবাহান হাটে ইচ্ছা অনুযায়ী টোল আদায় করছে। ক্ষুদ্র ক্রেতা-বিক্রেতারা অতিরিক্ত টোল দিতে না চাইলে তাদের অপমানিত হতে হয়।
অপরদিকে রনচন্ডী, সিপাইপাড়া, তিরনই হাট, পাগলীডাংগী হাটগুলোতে নির্দিষ্ট কসাইখানা নেই। রনচন্ডী বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, হাটে যত্রতত্র মলমূত্র পড়ে থাকায় বেশি একটা সময় হাটে থাকা যায় না। যত্রতত্র গবাদীপশু জবাই করার কারণে রক্ত, আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে রাখার কারণে পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। স্যানিটেশনের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এর ফলে হাটবাজারে আসা সাধারণ লোকজন যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অপরদিকে হাটবাজারে অপরিকল্পিতভাবে হাটবাজারে দোকানপাট গড়ে উঠায় ক্রেতা-বিক্রেতারা হাটবাজারে অভ্যন্তরীন সড়ক দখল করে ধান, পাট, গমসহ বিভিন্ন পন্য বেচাকেনা করে থাকেন। হাটবাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নেই কোন ছাউনি। ফলে সামান্য বৃষ্টির পানিতে হাটুপানি জমে যায়।
নলকূপ না থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট বিরাজ করছে। হাটবাজারগুলোতে অবৈধভাবে বাড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছে। গড়ে উঠেছে ছোট বড় হাসকিং মিল। এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি খাদেমুল ইসলাম জানান, গ্রামীণ জনপদের বাণিজ্যিক উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রই হচ্ছে হাটবাজার। এ হাটবাজার উন্নয়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।