৫২ খেলাধুলা ডেস্ক ।।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার কৃতিত্ব অর্জন করল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
অকল্যান্ডে টসে জিতে আগে ব্যাট করে ৪৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৮১ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃষ্টি আইনে নিউজিল্যান্ডের জয়ের টার্গেট দাঁড়িয়েছিল ২৯৮ রান। ম্যাচের এক বল বাকি থাকতে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডেল স্টেইনকে ছক্কা মেরে দলকে ৪ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের গ্র্যান্ট ইলিয়ট।
২৯৮ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই আগ্রাসী ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ড। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়াদের সামনে অনেক সুযোগ আসলেও রানআউট আর ক্যাচ ক্যাচ মিসের দরুণ ম্যাচটি অনেকটা বলে কয়ে বেরিয়ে যায় ব্ল্যাক ক্যাপসদের হাতে।
দলীয় ৭১ রানের সময় মরনে মরকেলের বলে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। তার ব্যাট থেকে আসে ৫৯ রানের ইনিংস। দলীয় স্কোরে ১০ রান যোগ করতেই আবারো উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এবারেও মরনে মরকেল। শিকার কেন উইলিয়ামসন। দলীয় ১২৮ রানের সময় আউট হন আগের দিনের নায়ক মার্টিন গাপটিল। তবে জয়ের পথে দারুণ ভূমিকা রাখেন ব্যাটসম্যান গ্র্যান্ট ইলিয়ট। তার ৮৪ রানের ইনিংসটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে পিছনে ফেলার জন্য দারুণ কাজ করে।
শুরুটা দারুণ করলেও মাঝপথে ঝিমিয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। রান কমে আসে। ওই মূহূর্তে ফাইনালের পথটা খানিকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল স্বাগতিক দলটির জন্য। কিন্তু নাটকীয়ভাবে কয়েকটি রান আউট মিস এবং একাধিক ক্যাচ ফেলে দেয়ায় ম্যাচের মোড় ঘুরতে সময় লাগেনি। বিশেষ করে ৪৩তম ওভারেই দুইটি ক্যাচ ফেলেছে প্রোটিয়ারা। সবমিলিয়ে কিছুটা হাতে করেই ম্যাচটি ব্ল্যাক ক্যাপদের কাছে ছেড়ে দিতে হয়েছে ভিলিয়ার্সদের।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৩১ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সাজঘরে ফিরেছেন দুই ওপেনার ডি কোক (১৪) ও আমলা (১০)। দু’জনকেই আউট করেন আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট।
অল্প রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর ফাফ ডু প্লেসিস ও রিলি রসাউ ৮৩ রানের জুটি গড়েন। যা দক্ষিণ আফ্রিকাকে তৈরি করে দেয় বড় সংগ্রহের মঞ্চ। নিউজিল্যান্ডের কোরে অ্যান্ডারসনের বলে সাজঘরে ফিরেছেন রসাউ, ব্যক্তিগত ৩৯ রানে। তবে প্লেসিসের চড়াও হন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ও ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি ও ১৫০ রানের মালিক এবি ডি ভিলিয়ার্স। প্লেসিসের সঙ্গে তিনি ১০৩ রানের জুটি গড়েন মাত্র ১২.১ ওভারে। এরপর ম্যাচের ৩৮তম ওভারে বৃষ্টি শুরু হলে খেলা বন্ধ ছিল। ঘণ্টাখানেক পর খেলা শুরু হলে তা বৃষ্টি আইনে ৪৩ ওভারের খেলায় পরিণত হয়।
বৃষ্টির পর ম্যাচের প্রথম বলেই আউট হয়েছেন প্লেসিস। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বোচ্চ ৮২ রান করেছেন তিনি। এরপর ক্রিজে যিনি এসেছেন, সেই ডেভিড মিলার সবচেয়ে বড় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের শিবিরে। আউট হওয়ার আগে মাত্র ১৮ বলে ৪৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন মিলার।
মিলার যখন আউট হয়েছেন তখন দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের বাকি ৪ বল। ওই ৪টি বলে নতুন ব্যাটসম্যান জেপি ডুমিনি সংগ্রহ করেছেন ৮ রান। উইকেটের অপর প্রান্তে অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স তখন অপরাজিত রয়েছেন ৪৫ বলে ৬৫ রান নিয়ে। নির্ধারিত ৪৩ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে তাই ৫ উইকেটে ২৮১ রান।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ৩টি উইকেট নিয়েছেন কোরে অ্যান্ডারসন। আর ট্রেন্ট বোল্ট নিয়েছেন ২ উইকেট। এই দুটি উইকেটের সুবাদে চলতি আসরের পাশাপাশি বিশ্বকাপের কোনো আসরে নিউজিল্যান্ডেরও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বোল্ট।
সেমিফাইনালের এই ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন গ্র্যান্ট ইলিয়ট।
আগামী ২৯ মার্চ শিরোপা লড়াইয়ে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনাল ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে খেলতে নামবে অপরাজিত দল হিসেবে ফাইনালে জায়গা করে নেয়া নিউজিল্যান্ড।