৫২ রাজনীতি ডেস্ক ।।
জমে উঠেছে ঢাকা সিটি ও চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন এখন দলীয় সরকারের নির্বাচনে পরিনত হয়েছে। প্রধান দুটি দল সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ায় এটি দলীয় নির্বাচনে রুপ লাভ করেছে। এখানেই মুলত জড়িয়ে আছে দুটি প্রধান দলের প্রেষ্ট্রিজ ইস্যু। তবে বেগম জিয়া যে গত ৫ই জানুয়ারী’১৪ইং সংসদ নির্বাচনের মত ভুল সিদ্ধান্ত নেননি, এটাই গনতন্ত্রের জন্য সবচেযে বড় পাওয়া।
বিএনপি থেকে বারবার বলা হচ্ছে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করতে হবে। সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু’ ঢাকা ও চট্রগ্রাম ছাড়া সব এলাকায় অবরোধ ও হরতাল রেখে কিভাবে লেভের প্লেয়িং ফিল্ড হবে সেটার ব্যাখা দেয়নি দলটির নীতি নির্ধারকরা। দীর্ঘ ৩মাসের অবরোধ ও হরতালে দেশবাসী যখন অতীষ্ঠ,তখন বিএনপি’র সিটি নির্বাচনে যোগ দেয়াকে সাধারন মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছে,ঠিক সেই মুহুর্তে অবরোধ ও হরতাল রেখে আতংক গ্রস্থ লোকদের মনে স্বরিস্থর শেষ আশাটুকুতে আগুনে ঘি ঢালার মত অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনএ বিষয়টি পরিস্কার করতে হবে যে বিরোধীদলের প্রার্থীদের অযথা নির্বাচনী প্রচারে হয়রানী বা পক্ষপাতিত্ব না করে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। যাতে সাধারন মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। আর বিরোধীদের ও নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করতে হবে,যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন তারা সম্পন্ন করতে পারে। সরকারের দায়িত্ব আছে সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা।
যাতে এ নির্বাচন নিয়ে বিরোধীরা কোন বিতর্ক সৃষ্টি করতে না পারে। বিদেশের কাছেও যেন বলতে না পারে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বিধায় তারা সংসদ নির্বাচনে যায়নি। নতুন করে যেন তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন করতে না পারে,সেজন্যই সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। কারন এ নির্বাচনের ফলাফলে তো আর সরকার পতন হবে না। সিটি নির্বাচনে বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বাছাইয়ে এগিয়ে আছে। বিএনপি প্রার্থী বাছাইয়ে বেকায়দায় থাকায় আওয়ামীলীগের লাভই হয়েছে। নির্বাচনী আচরন বিধি যেন কেউ লংঘন করতে না পারে,সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও নির্বচন কমিশনের।
এ নির্বাচনে যদি তিন সিটিতে বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা জয়ী হলেও সরকারের পতন হবে না এটা নিশ্চিত। সেজন্য সরকারকেই প্রমান করতে হবে দলীয়ভাবেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। বিএনপি দলীয় কার্যালয় খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কিছুটা আন্তরিকতা প্রমানিত হলেও আরেকটি বিষয়ে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যেন কোন ভাবেই মন্ত্রী-আমলা ও নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্টরা নির্বাচনী আচরন বিধি লংঘন না করতে পারেন। আমি বার বার বলেছি,এ নির্বাচন শত উস্কানীর মুখেও সরকারকে সুষ্ঠু ,অবাধ ও নিরপেক্ষ করে প্রমান করতে হবে দলীয় সরকারের অধীনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
তত্বাবধায়ক ও নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজন নেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। যেহেতু সরকারে আছে মহাজোট,যেহেতু তাদেরই দায়িত্ব বেশী নির্বাচনী পরিবেশ উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি করা। সরকার বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দিয়ে সমঝোতার গুমোট পরিবেশ আরো হাল্কা করেছে। এক্ষেত্রে ২০দলীয় জোটের ও দায়িত্ব আছে। তারা একদিকে সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন,অন্য দিকে অবরোধ ওহরতাল বহাল রেখে সাধারন মানুষকে আতংকে রাখছেন।
যেহেতু অবরোধ ও হরতাল চলছে,যেহেতু কোথাও যদি তাদের কর্মীরা বাসে ট্রাকে পেট্রোল বোমা মেরে ঢাকা- চট্রগ্রামে আশ্রয় নেন,তখন আইনশৃঙ্খঁলা বাহিনী তাদের আটকে অভিযান চালালে দলীয় কর্মীদের হয়রানী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হলে সেটা বেমানান হবে কি না ২০দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব একটু ভেবে দেখবেন।
সবশেষে ৫ এপ্রিল ২০১৫ বেগম জিয়া দুর্নীতি মামলায় আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়েছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন চেয়েছেন। আদালত দুটি মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। এটি নি:সন্দেহে রাজনীতির ভাল দিক। এখন দু-পক্ষকেই সহনশীল হতে হবে। আদালতের আদেশের পর সিটি নির্বাচনের গুরুত্ব
যেমন বেড়ে গেল,তেমনি দুদলেরই দায়িত্ব আছে সিটি নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার। পাশাপাশি ২০ দলীয় জোট অবরোধ ও হরতাল তুলে নিয়ে সাধারন মানুষকে স্বস্থিতে বসবাসের সুযোগ করে দিবেন এটিই সাধারন মানুষের আশা। আগে দেশ, পরে রাজনীতি- একথাটা দুপক্ষকেই সমান ভাবে ভাবতে হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।