রফিকুজজামান রুমান ।।
বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে কতিপয় অমানুষের পাশবিকতা, আমার ধারণা, সমাজের খণ্ডিত কোন চিত্র নয়। প্রকাশের ধরনে এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা গেলেও ঘটনার নেপথ্যের কারণকে বিচ্ছিন্ন বলার সুযোগ নেই। প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্য যেভাবেই হোক না কেন, এই পাশবিকতাই আধুনিক সময়ের অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা হয়ে উঠছে দিনকে দিন। সময়টা ভোগের। কিন্তু সেটিরও তো একটি বিধি আছে। আমাদের সমস্যা হলো, বিধি রপ্ত করবার আগেই ভোগের মানসিকতায় বেড়ে উঠছি।
একটি ছোট্ট বাচ্চার হাতে মোবাইল ফোন দেয়া হয়েছে তাকে এটা না বুঝিয়েই যে, এর ব্যবহারের একটি নিয়ম আছে। নিয়ম দু’ধরনের; একটি এর যান্ত্রিক দিক, অন্যটি আদবকেতার দিক। বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি সমান্তরালভাবে একটি ভয়াবহ দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। আমরা ঠিক প্রস্তুত হওয়ার আগেই, যেটিকে বলছি আদবকেতার দিক, সবধরনের সরঞ্জাম পেয়ে যাচ্ছি। ভালো করে সাঁতার শিখবার আগেই আমরা নেমে পড়ছি তথ্য-প্রযুক্তি-সাগরে। হাবুডুবু খাচ্ছি। সামলিয়ে উঠতে পারছি না নিজেদেরকে। খেই হারিয়ে ফেলছি। তথ্য-প্রযুক্তি/গণমাধ্যম আমাদেরকে “ভোক্তা” বানাচ্ছে, ভোগের “আর্ট” শেখাচ্ছে না। তথ্যের অবাধ প্রবাহ তখনই সুন্দর যখন সেখানে তথ্য ভোগের নিয়মটিও গুরুত্ব পায়। এই “নিয়ম” না শিখিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা হলে সেখানে বারবার সৃষ্টি হবে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ঐ লজ্জাজনক ঘটনা।
দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে গিয়ে বিবস্ত্র হতে হয়েছে নারীকে। ধারণা করাই যায়, আরো অসংখ্য মেয়ে নানারকম হয়রানির শিকার হয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী? আরো ২০/২৫ বছর আগেও তো এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই বৈশাখ উদযাপন করা হতো। তখন এধরনের ঘটনা ঘটেনি। এখন ঘটছে। কেন? ২০/২৫ বছরে আমরা আরো বেশি “আধুনিক” হয়েছি, আরো বেশি “ভোক্তা” হয়েছি। সেটি না হয়ে উপায়ও নেই। কিন্তু আধুনিকতার নিক্তিতে যতোটা উপরে উঠেছি, ঠিক ততোটা মূল্যবোধের চর্চা কি সঙ্গে নিয়ে আসতে পেরেছি? পারিনি। অর্থাৎ আমাকে আধুনিক করা হয়েছে; আধুনিকতাকে কীভাবে ধারণ করতে হয় সেই নিয়মটি/মূল্যবোধটি শেখানো হয়নি।
ফলে আধুনিকতার প্রকাশ হয়ে উঠছে বীভৎস। দেশে যৌন হয়রানি/ধর্ষণ যেকোন সময়ের চেয়ে ভয়ানক রূপ নিয়েছে। যৌন নির্যাতনবিরোধী আইন থাকার পরেও সেটি কমানো যাচ্ছে না। কমবে বলে মনেও হয় না। মাঝে মধ্যে আইন বড় বেশি অসহায় হয়ে পড়ে, যেমন অসহায় হয়ে পড়ে শিক্ষকের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার কোন ছাত্রী। প্রতিবাদ করতে পারে না ফেল করিয়ে দেয়ার ভয়ে কিংবা ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার আতঙ্কে। একজন শিক্ষকের কাছে ছাত্রী নিরাপদ নয় যে সমাজে, সেখানে ১৫/২০ লাখ মানুষের ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পহেলা বৈশাখে যা হয়েছে তার থেকে বের হওয়ার সহজ কোন তরিকা নাই। আইন মানুষের জন্য। পাশবিকতাকে শুধু আইন দিয়ে রুদ্ধ করা যায় না।
যার মধ্যে পাশবিকতা আছে তাকে মানুষ না বানাতে পারলে অন্য কোন বয়ানই কার্যকর হবে না। এই সমাজে এই প্রযুক্তি/গণমাধ্যমে মানুষ বানানোর পাঠ কই! এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে বিবস্ত্র করা হয়েছিল বাঁধন নামের একটি মেয়েকে। এই ঢাকারই এক নামী স্কুলের এক ছাত্রী পরিমল নামের শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসব করেছে। প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্য শত ঘটনার জন্ম হচ্ছে প্রতিদিন। নিশ্চিত থাকুন, আগামীতেও থার্টিফার্স্ট নাইট কিংবা পহেলা বৈশাখে কিংবা অন্য কোন অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে যদি না মূল্যবোধের/ নৈতিকতার/নারীকে সম্মান করার দীক্ষা ছড়িয়ে দেয়া হয়। যারা এ কাজ করেছে নিন্দা অবশ্যই তাদের প্রাপ্য, শাস্তিও।
তবে চাবুক দিয়ে সাময়িক দমন করা যায়, সামগ্রিক চিত্র বদলানো যায় না। এবার অন্য কথা। আচ্ছা, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক কী? বৈশাখ একেবারেই আমাদের নিজেদের একটি অনুষ্ঠান। প্রাণের, আবেগের। বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় আয়োজন এই বৈশাখ। এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে মাটির টান, নাড়ির টান। তাই যদি হয়, তাহলে ঢাকার এই ইট-পাথরের দমবন্ধ করা কৃত্রিম পরিবেশে এর উদযাপন কেন? পহেলা বৈশাখ লক্ষ লক্ষ মানুষ কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ছোটে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো গ্রাম না। সেখানে তো মাটির টান নেই। সেখানে তো নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয় আটকে যায় উঁচু অট্টালিকায়। এমন একটি প্রাণের উৎসব এমন কৃত্রিমতায় উদযাপনের জন্য মানুষের ছুটে চলা বড় বেমানান।
ব্যবস্থা করতে হবে গ্রামে ছুটে যাওয়ার যেখানে সত্যিই নববর্ষের আবহ খুঁজে পাওয়া যায়। তিন দিন সরকারি ছুটি চালু করতে হবে। ঈদের মতো থাকবে ‘বৈশাখী বোনাস’। আপনজনদের জন্য কেনাকাটা করে শহরের মানুষ ছুটে যাবে গ্রামে। এতে ঢাকার চাপ কমবে। দুই ঈদের ছুটিতে গ্রামমুখী মানুষের যাতায়াত বিড়ম্বনাও অনেকটা কমে আসবে। কেউ এই ঈদে গ্রামে যাবে, কেউ অন্য ঈদে, কেউবা আবার পহেলা বৈশাখে। একটা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলা নববর্ষে তিনদিনের সরকারি ছুটির বিষয়টি সরকার ভেবে দেখবে কি?
বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে কতিপয় অমানুষের পাশবিকতা, আমার ধারণা, সমাজের খণ্ডিত কোন চিত্র নয়। প্রকাশের ধরনে এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা গেলেও ঘটনার নেপথ্যের কারণকে বিচ্ছিন্ন বলার সুযোগ নেই। প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্য যেভাবেই হোক না কেন, এই পাশবিকতাই আধুনিক সময়ের অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা হয়ে উঠছে দিনকে দিন। সময়টা ভোগের। কিন্তু সেটিরও তো একটি বিধি আছে। আমাদের সমস্যা হলো, বিধি রপ্ত করবার আগেই ভোগের মানসিকতায় বেড়ে উঠছি। একটি ছোট্ট বাচ্চার হাতে মোবাইল ফোন দেয়া হয়েছে তাকে এটা না বুঝিয়েই যে, এর ব্যবহারের একটি নিয়ম আছে। নিয়ম দু’ধরনের; একটি এর যান্ত্রিক দিক, অন্যটি আদবকেতার দিক।
বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি সমান্তরালভাবে একটি ভয়াবহ দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। আমরা ঠিক প্রস্তুত হওয়ার আগেই, যেটিকে বলছি আদবকেতার দিক, সবধরনের সরঞ্জাম পেয়ে যাচ্ছি। ভালো করে সাঁতার শিখবার আগেই আমরা নেমে পড়ছি তথ্য-প্রযুক্তি-সাগরে। হাবুডুবু খাচ্ছি। সামলিয়ে উঠতে পারছি না নিজেদেরকে। খেই হারিয়ে ফেলছি। তথ্য-প্রযুক্তি/গণমাধ্যম আমাদেরকে “ভোক্তা” বানাচ্ছে, ভোগের “আর্ট” শেখাচ্ছে না। তথ্যের অবাধ প্রবাহ তখনই সুন্দর যখন সেখানে তথ্য ভোগের নিয়মটিও গুরুত্ব পায়।
এই “নিয়ম” না শিখিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা হলে সেখানে বারবার সৃষ্টি হবে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ঐ লজ্জাজনক ঘটনা। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে গিয়ে বিবস্ত্র হতে হয়েছে নারীকে। ধারণা করাই যায়, আরো অসংখ্য মেয়ে নানারকম হয়রানির শিকার হয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী? আরো ২০/২৫ বছর আগেও তো এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই বৈশাখ উদযাপন করা হতো। তখন এধরনের ঘটনা ঘটেনি। এখন ঘটছে। কেন? ২০/২৫ বছরে আমরা আরো বেশি “আধুনিক” হয়েছি, আরো বেশি “ভোক্তা” হয়েছি। সেটি না হয়ে উপায়ও নেই। কিন্তু আধুনিকতার নিক্তিতে যতোটা উপরে উঠেছি, ঠিক ততোটা মূল্যবোধের চর্চা কি সঙ্গে নিয়ে আসতে পেরেছি? পারিনি।
অর্থাৎ আমাকে আধুনিক করা হয়েছে; আধুনিকতাকে কীভাবে ধারণ করতে হয় সেই নিয়মটি/মূল্যবোধটি শেখানো হয়নি। ফলে আধুনিকতার প্রকাশ হয়ে উঠছে বীভৎস। দেশে যৌন হয়রানি/ধর্ষণ যেকোন সময়ের চেয়ে ভয়ানক রূপ নিয়েছে। যৌন নির্যাতনবিরোধী আইন থাকার পরেও সেটি কমানো যাচ্ছে না। কমবে বলে মনেও হয় না। মাঝে মধ্যে আইন বড় বেশি অসহায় হয়ে পড়ে, যেমন অসহায় হয়ে পড়ে শিক্ষকের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার কোন ছাত্রী। প্রতিবাদ করতে পারে না ফেল করিয়ে দেয়ার ভয়ে কিংবা ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার আতঙ্কে।
একজন শিক্ষকের কাছে ছাত্রী নিরাপদ নয় যে সমাজে, সেখানে ১৫/২০ লাখ মানুষের ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পহেলা বৈশাখে যা হয়েছে তার থেকে বের হওয়ার সহজ কোন তরিকা নাই। আইন মানুষের জন্য। পাশবিকতাকে শুধু আইন দিয়ে রুদ্ধ করা যায় না। যার মধ্যে পাশবিকতা আছে তাকে মানুষ না বানাতে পারলে অন্য কোন বয়ানই কার্যকর হবে না। এই সমাজে এই প্রযুক্তি/গণমাধ্যমে মানুষ বানানোর পাঠ কই! এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে বিবস্ত্র করা হয়েছিল বাঁধন নামের একটি মেয়েকে।
এই ঢাকারই এক নামী স্কুলের এক ছাত্রী পরিমল নামের শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসব করেছে। প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্য শত ঘটনার জন্ম হচ্ছে প্রতিদিন। নিশ্চিত থাকুন, আগামীতেও থার্টিফার্স্ট নাইট কিংবা পহেলা বৈশাখে কিংবা অন্য কোন অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে যদি না মূল্যবোধের/ নৈতিকতার/নারীকে সম্মান করার দীক্ষা ছড়িয়ে দেয়া হয়। যারা এ কাজ করেছে নিন্দা অবশ্যই তাদের প্রাপ্য, শাস্তিও। তবে চাবুক দিয়ে সাময়িক দমন করা যায়, সামগ্রিক চিত্র বদলানো যায় না। এবার অন্য কথা। আচ্ছা, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক কী? বৈশাখ একেবারেই আমাদের নিজেদের একটি অনুষ্ঠান। প্রাণের, আবেগের। বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় আয়োজন এই বৈশাখ।
এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে মাটির টান, নাড়ির টান। তাই যদি হয়, তাহলে ঢাকার এই ইট-পাথরের দমবন্ধ করা কৃত্রিম পরিবেশে এর উদযাপন কেন? পহেলা বৈশাখ লক্ষ লক্ষ মানুষ কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ছোটে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো গ্রাম না। সেখানে তো মাটির টান নেই। সেখানে তো নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয় আটকে যায় উঁচু অট্টালিকায়। এমন একটি প্রাণের উৎসব এমন কৃত্রিমতায় উদযাপনের জন্য মানুষের ছুটে চলা বড় বেমানান। ব্যবস্থা করতে হবে গ্রামে ছুটে যাওয়ার যেখানে সত্যিই নববর্ষের আবহ খুঁজে পাওয়া যায়। তিন দিন সরকারি ছুটি চালু করতে হবে। ঈদের মতো থাকবে ‘বৈশাখী বোনাস’।
আপনজনদের জন্য কেনাকাটা করে শহরের মানুষ ছুটে যাবে গ্রামে। এতে ঢাকার চাপ কমবে। দুই ঈদের ছুটিতে গ্রামমুখী মানুষের যাতায়াত বিড়ম্বনাও অনেকটা কমে আসবে। কেউ এই ঈদে গ্রামে যাবে, কেউ অন্য ঈদে, কেউবা আবার পহেলা বৈশাখে। একটা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলা নববর্ষে তিনদিনের সরকারি ছুটির বিষয়টি সরকার ভেবে দেখবে কি?