কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার মামলায় ভারতীয় হাইকমিশনার ও কূটনীতিকদের জড়িত থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। গতকাল রবিবার কানাডা সরকার দাবি করলেও ভারত তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।
বিদেশ মন্ত্রণালয় সোমবার জানায়, ভারতকে মিথ্যা অভিযোগ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। কানাডা সরকারের কর্মকাণ্ড ভোটব্যাংকের রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয় বলে দাবি করেছে ভারত।
নিজ্জর নিহত হওয়ার পর ২০২৩ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দেশটির সংসদে ভারতের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ভারতের কাছে তদন্তে সহযোগিতাও চেয়েছিলেন। ভারত কেবল অভিযোগ অস্বীকারই করেনি, শুরু থেকেই প্রমাণ চেয়ে আসছে। ভারতের অভিযোগ, কানাডা সরকার এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
বিদেশ মন্ত্রণালয় আজ জানিয়েছে, ভারত বারবার প্রমাণ দাবি করেছে। কিন্তু কানাডা তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এবারের সরকারি চিঠিতে উল্লিখিত বিষয়গুলিরও কোনো ভিত্তি নেই। নিঃসন্দেহে, তদন্তের নামে ভারতকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে। আর এটি করা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে।
ট্রুডোর বিরুদ্ধে ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। ভারতের অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থে ট্রুডো তার মন্ত্রিসভায় খালিস্তানপন্থী শিখ নেতাদের নিয়োগ করেছেন। ভারত দীর্ঘদিন ধরে ভারতে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সক্রিয় কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর দাবিও জানিয়েছে।
সোমবারের জবাবি চিঠিতে ভারত জানিয়েছে, ট্রুডো সরকার সন্ত্রাসী এবং তাদের সংগঠনকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। তারা ভারতীয় কূটনীতিকদের প্রাণহানির হুমকিও দিচ্ছে। তবুও সরকার তাদের বাকস্বাধীনতার অধিকারের কথা বলে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বিদেশ মন্ত্রণালয়ের জবাবী চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতি ট্রুডোর শত্রুতা সুপরিচিত। ২০১৮ সালে তিনি নিজের ভোটব্যাংককে তোষামোদ করতে ভারতে এসেছিলেন। তার মন্ত্রিসভায় এমন ব্যক্তিরা রয়েছেন, যারা সাম্প্রদায়িকতা ও ভারতবিরোধিতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তার সরাসরি হস্তক্ষেপে তার ভোটব্যাংককে তুষ্ট করার জন্য তিনি কতটা নিচে নামতে পারেন তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
কানাডার সরকারের চিঠিতে নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মার নাম জড়িত রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জবাবি চিঠিতে তার নামের প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়েছে, ভার্মা তার 36 বছরের কর্মজীবনে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি জাপান ও সুদানে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি ইতালি, তুরস্ক, ভিয়েতনাম ও চীনে সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। কানাডা সরকার তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে, তা হাস্যকর এবং অবজ্ঞার যোগ্য।
ট্রুডো যে অভিযোগে ভারতকে আক্রমণ করতে চান, একই অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। কানাডার নাগরিক খালিস্তানি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে ভারত জড়িত বলে অভিযোগ করেছিল বাইডেন প্রশাসন। তবে ভারত এ অভিযোগ অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বরং এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে।
গত শুক্রবার লাওসে আসিয়ান সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছিল। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, সেই সাক্ষাতে বিশেষ কোনো আলোচনা হয়নি।