‘ধর্ষণ করে হত্যার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড’ সংক্রান্ত ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ বিধান আইনের ৬(২) ধারাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে রায়ে আইনটির ৬(৩) ও ৬(৪) ধারা এবং ২০০০ সালের সংশোধিত আইনের ৩৪(২) ধারাকেও অসাংবিধানিক বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত রায় বহাল রেখে চূড়ান্ত এ রায় দেন।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিশু শুক্কুর আলীর করা রিট আবেদনে ২০১০ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ বিধান আইনের ৬(২) ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর ৩ মার্চ শুনানি শেষে রায়ের জন্য (সিএভি) তা অপেক্ষমাণ রাখে আদালত। আজ এর চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হল।
আদালতে রিটকারীদের আইনজীবী ছিলেন এমআই ফারুকি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
রিটকারীদের জুনিয়র আইনজীবী আব্দুল মান্নান জানান, আপিল বিভাগ সংশ্লিষ্ট আইনের ধারাগুলো অসাংবিধানিক বললেও শুক্কুর আলীর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট আইনের ধারা অসাংবিধানিক বলে রায় দেওয়ার সময় শুক্কুর আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মামলাটি নিয়ে আপিল বিভাগে যেতে বলেছিলেন। সে অনুসারে আমরা রিটের পাশাপাশি ওই রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল করি।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার শিবরামপুর গ্রামের শুক্কুর আলী (১৪) শিশু সুমিকে (৭) ধর্ষণ করে হত্যা করে। এ মামলায় ২০০১ সালের ১২ জুলাই বিচারিক আদালত শুক্কুর আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ২০০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এবং ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ এ রায় বহাল রাখে। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে ওই বছরের ৪ মে আপিল বিভাগ তাও খারিজ করে দেয়। এরপর ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’১৯৯৫ এর ৬(২) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। এ রিট আবেদনের একটি পক্ষ ছিল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শুক্কুর আলী। রিটের প্রেক্ষিতে তার ফাঁসির আদেশ স্থগিত হয়ে যায়।
১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ বিধান আইনের ৬(২) ধারায় ধর্ষণ করে হত্যা ঘটানোয় কেবল মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। তবে ২০০০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আইনটি রহিত করা হয়। নতুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯(২) ধারায় ধর্ষণ করে হত্যার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। এতে পুরনো অপরাধের ক্ষেত্রে পুরোনো আইনের প্রয়োগ হবে বলেও বলা হয়।