সরকারের উচিত সৌর বিদ্যুৎ বিনিয়োগের নীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা: সিপিডি
৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদনপত্র বাতিল করা হওয়ায় সেগুলোতে বিনিয়োগ করা ব্যক্তিদের অনিশ্চয়তা দূর করতে সরকারের আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সিপিডি সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে যে, নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ‘বিপরীত নিলাম’ পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বান করা হতে পারে। এ ছাড়াও সিপিডি মনে করছে, সৌর বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে সরকারের নীতি স্থিতিশীল রাখা জরুরি।
‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ: বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ আকর্ষণের পদ্ধতি’ শীর্ষক একটি সেমিনারে আজ রাজধানীর একটি হোটেলে এই সুপারিশ করেছে সিপিডি।
এর আগে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে নতুন কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে, পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃক নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক ৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন ছাড়াই চুক্তি করার ক্ষমতা হারিয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যে জমি ক্রয়সহ অন্যান্য কিছু খাতে বিনিয়োগ করেছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সেমিনারটির শুরুতে একটি অধ্যয়ন উপস্থাপন করা হয়। অধ্যয়নটিতে সুপারিশ করা হয়েছে যে, নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ‘বিপরীত নিলাম’ পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বান করা যায়। সাধারণত, টেন্ডারে নিয়মান মোতাবেক সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন মূল্য উদ্ধৃতি দেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। বিপরীত নিলাম পদ্ধতিতে সরকার নিজেরাই একটি মূল্য নির্ধারণ করবে। এরপর যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে জয়ী হবে, তারা কাজটি পাবে। এভাবে ৩৭টি নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কেন্দ্র, যার মধ্যে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে, সেগুলোও এই টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে। বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য মুদ্রা বিনিময়ের সুযোগসুবিধা, দেশীয় ব্যাংকগুলো থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, রাজস্ব বৃদ্ধি করতে না পারলে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। নীতিগত সংস্কার এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে ইতিমধ্যেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখন একটি অপরিহার্য বিষয়। বিশ্বের কোথাও কর ছাড়া ব্যবসা করা যায় না। ব্যবসা থেকে আয়ের একটা অংশ কর হিসেবে আদায় করা হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন স্থগিত করার কারণেই অনুমোদনপত্রগুলো বাতিল হয়েছে। তবে যেসব বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন, তাদের কীভাবে প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত করা যায়, সেটি বিদ্যুৎ বিভাগ ভেবে দেখছে। খুব শিগগিরই টেন্ডার আহ্বান করে চুক্তি চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, ৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদনপত্র বাতিল করা আত্মঘাতী একটি সিদ্ধান্ত। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ইতিমধ্যে বিনিয়োগ হয়েছে। তাই সরকারের এই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
সেমিনারের খোলা আলোচনা অংশে বক্তারা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। এ ছাড়া বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
আইইইএফএ বাংলাদেশের জ্বালানি বিশ্লেষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘরে ঘরে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই খাতে বিশেষায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয়। তাই সরকারের এখানে অর্থায়নের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা উচিত। আমদানি শুল্ক কমানো না হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ৪০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না।
সেমিনারটির সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এবং নিবন্ধটি উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।