আন্তর্জাতিক
থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সাগরে ভাসছে শত শত বাংলাদেশি আর রোহিঙ্গা অভিবাসী। সাগরে দিনের পর দিন অনাহারে থেকে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে মানুষগুলো। তাদের বহনকারী নৌকা ভিড়তে পারছে না কোনো উপকূলেই।
শুক্রবার সকালে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ উপকূল থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে আসা দুইশ অভিবাসী উদ্ধার হয়েছে। সাঁতার কেটে উপকূলের দিকে আসতে দেখে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে অভিবাসীদের উদ্ধার করে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী।
ধারণা করা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমা থেকে নৌকা ফিরিয়ে দেয়ার ভয়ে তারা পানিতে লাফ দিয়ে পড়ে।
ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে এরই মধ্যে ডুবে গেছে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। নৌকাডুবির পর শুক্রবার সাতশ’র ও বেশি বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে যাওয়ার আগে নৌকাটি বুধবার মালয়েশিয়া উপকূলে পৌঁছালে সেদেশের নৌ-বাহিনী নৌকাটিকে ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রসীমায় তাড়িয়ে দেয়।
দু’সপ্তাহ আগে থাইল্যান্ডের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে গণকবর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার থেকে মানবপাচারের ভয়াবহতা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পুলিশ জানায়, সমুদ্রপথে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের পাচারের প্রধান পথ বাংলাদেশের কক্সবাজার। দালালরা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ায় চাকরি দেয়ার কথা বলে লোকদের নিয়ে আসে কক্সবাজারে। এরপর নৌকার করে তাদের বঙ্গোপসাগরে পাচারকারীদের বড় ইঞ্জিন বোট বা জাহাজে তুলে দেয়া হয়। দালালরা মূল পাচারকারীদের কাছ থেকে এ জন্য পায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এরপর পাচারকারীরা তাদের থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার বনে গোপন বন্দিশিবিরে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে। দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা মুক্তিপণ পেলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু মুক্তিপণ না দিতে পারলে অবধারিত মৃত্যু।
পুলিশ জানায়, গত আড়াই বছরে কক্সবাজার থেকে সাগরপথে পাচারের সময় ট্রলার ডুবি ও পাচারকারীদের গুলিতে মারা গেছেন পাঁচ শতাধিক হতভাগ্য মানুষ। নিখোঁজ রয়েছেন দু’হাজারেরও বেশি।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোহিঙ্গারা কেন এভাবে অজানার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে পাড়ি দিচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের সাধারণ সম্পাদক জনাব জমিরউদ্দিন জানান, মিয়ানমারের নিজ জন্মভূমিতে রাষ্ট্রীয় পরিচয়বিহীন হয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বাঁচার আশায় এসব অসহায় মানুষেরা এমন ঝুঁকি নিচ্ছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি উল্লেখ করে জমিরুদ্দিন জানান, অগণিত কর্মহীন মানুষ অপেক্ষাকৃত ভালো উপার্জনের আশায় বা উন্নত জীবনের লোভে এসব ফাঁদে পা দিয়ে বিপদে পড়ছেন।
মানবপাচারের ভয়ানক এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে শনিবার কক্সবাজার জেলা পুলিশ এক সভার অয়োজন করেছে। সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক বলেছেন, মাদক ও মানবপাচার প্রতিরোধে সরকার জিরো টলারেন্স দেখাবে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন অভিযোগ করেছেন, দেশে সঠিক কর্মসংস্থান না থাকায় হাজার হাজার বাংলাদেশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের উদ্দেশে সাগর পাড়ি দিচ্ছে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান রিপন এ অভিযোগ করেন।
সরকার সময়মতো সঠিক পদক্ষপে না নেওয়ার কারণে অভিবাসন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড অভিমুখের অভিবাসীরা সাগরবক্ষে ভাসছেন। ক্ষুধার জ্বালায় তাঁরা মারা যাচ্ছেন। এই বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক রূপ নিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।’