ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি।
নির্বাচনের ২০ দিন পর সোমবার দুপুরে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি এ তথ্য প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে সরকারসমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংসদ সদস্যদের ক্ষমতার ব্যবহার ও প্রভাব বিস্তারের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন কার্যত একটি দলীয় নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী নির্বাচন ও সমর্থন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দলীয় সমর্থন নেয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনে বাধ্য করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব প্রার্থীর জন্য নির্বাচনী আইন সমানভাবে প্রয়োগ না করা এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের কারণে নির্বাচনে সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।
অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সমালোচনা বলেন, ‘কমিশন নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারা দৃঢ়তা দেখাতে পারেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের পেশাগত দায়িত্বের বাইরে ভোট জালিয়াতিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, “সার্বিক বিবেচনায় তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। এবারের সিটি নির্বাচনে ভোটারদের অধিকার হরণ করা হয়েছে।“
টিআইবি মনে করে, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে অবশ্যই স্বাধীন একটি নির্বাচন কমিশন থাকতে হবে। কমিশন দৃঢ় ও শক্তিশালী হতে হবে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও টিআইবির ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে মহিলাদের অংশগ্রহণ অনেক কম হয়েছে। সিংহভাগ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ছিল না। এটি সাংঘাতিক ব্যাপার। কারণ পোলিং এজেন্ট ছাড়া জাল ভোটার সনাক্ত করা যায় না।’
টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক শাহজাদা এম আকরামসহ আরও অনেকেই এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, “টিআইবি বলেছে, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তাদের ভাবখানা এমন যে টিআইবির সবাই সৎ আর দেশের বাকি সবাই অসৎ।”
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর মন্ত্রী বলেন, “টিআইবির মুখে আমরা কখনো ভালো কথা শুনি নাই। টিআইবির কাজই হচ্ছে খুঁত ধরা। আমরা আমাদের কাজ করে যাব। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। অথচ আমাদের কোনো ভালো কাজই টিআইবির চোখে পড়ে না। একসময় দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের জুতা পায়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। খালি পায়ে বাজারে যেত। এখন শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষই জুতা পায়ে দেয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, আয় বেড়েছে। আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ৭৮৭ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। সেটা এখন তিন লাখ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এগুলো কিছুই টিআইবির চোখে পড়ে না।”
টিআইবির কর্মকর্তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের এই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বলেন, ‘তিন সিটি নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ না হয়, তাহলে বিএনপি-জামায়াতের কাউন্সিলররা পাস করেন কীভাবে।’