
খাওয়ার ব্যাধিয় কীভাবে বুঝবেন
১৩ বছরের স্বচ্ছর নামের এক কিশোরের ওজন বেশি ছিল। ওজনের জন্য বাড়ি, স্কুল এমনকি রাস্তায়ও তাকে কথা শুনতে হতো। ওজন কমাতে কমাতে একসময় সে খাওয়া-দাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। দিনে এক-দু’টো ফল ছাড়া আর কিছুই খায় না। তার ওজন এতই কমে যায় যে সে দুর্বল হয়ে পড়ে। তার লিভারও ঠিকমতো কাজ করছিল না। হাসপাতালে ভর্তির পর ডাক্তাররা বলেছেন যে তার ‘খাওয়ার ব্যাধি’ হয়েছে। এটি এক ধরনের মানসিক সমস্যা। কাউন্সেলিং এবং কিছু ওষুধ খাওয়ার পর ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে উঠছে।
কাউকে খাবার খাওয়ার অভ্যাসে অস্বাভাবিক পরিবর্তন, ওজন বাড়ার ভয়ে খাবার গ্রহণ নিয়ে চিন্তা এবং সেই চিন্তার কারণে আচার-ব্যবহারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হলেই তাকে খাওয়ার ব্যাধি বলে। মেয়েদের এবং যুবক-যুবতীদের মধ্যে এই সমস্যার হার বেশি। বয়ঃসন্ধিকালে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কখনো কখনো এটি জটিল আকার ধারণ করে, যা ব্যক্তিকে মারাত্মক অসুস্থতার দিকে নিয়ে যায়। এমনকি সঠিক পরিমাণে পুষ্টি এবং খনিজ পদার্থ না পেলে মৃত্যুর কারণও হতে পারে। এই রোগে আক্রান্তরা যেকোনো খাবারের প্রতিই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। খাবার সামনে এলেই তারা একধরনের মানসিক অস্থিরতায় পড়ে যায়।
খাওয়ার ব্যাধির জন্য কোনো একটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে যেসব ঝুঁকির কারণে খাওয়ার ব্যাধি হতে পারে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে:
- বংশগতভাবে কারও যদি খাওয়ার ব্যাধি থাকে।
- পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, অ্যাংজাইটি, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার, বিষণ্নতা থাকলে বা শৈশবে কোনো ট্রমা ঘটলে খাওয়ার ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ে।
- নিজের ওজন, চেহারা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা অবসেশনের পর্যায়ে চলে গেলে এই রোগ হতে পারে।
- ওজন নিয়ে বুলিং-এর শিকার হলেও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
- পারিবারিক সম্পর্কগুলিতে সমস্যা থাকলেও খাওয়ার ব্যাধি হতে পারে।
খাওয়ার ব্যাধির বহু ধরন আছে। সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কারণে বিভিন্ন সমাজ এবং দেশে এর লক্ষণগুলি আলাদা হতে পারে। সাধারণত বেশি হয় এমন কিছু খাওয়ার ব্যাধি হল:
- অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা: অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসায় আক্রান্ত ব্যক্তি ওজন বাড়ার ভয়ে প্রায় একদমই কোনো খাবার খান না। হয়তো কিছু নির্দিষ্ট খাবার সামান্য পরিমাণে গ্রহণ করেন। যা তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফলে নানা শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাদের ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, ক্লান্ত হয়ে পড়েন, পুষ্টির অভাবে শারীরিক নানা রোগ হয়। চুল এবং নখ নষ্ট হতে থাকে।
- বুলিমিয়া নার্ভোসা: বুলিমিয়া নার্ভোসা যাদের রয়েছে, তাদের খাবার গ্রহণে কোনো অসুবিধা নেই। বরং তারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণেই খান। কিন্তু খাওয়ার পর তাদের মধ্যে অপরাধবোধ তৈরি হয়, মনে হয় এবার তাদের ওজন বাড়বে। তারপর তারা নিজের ইচ্ছায় বমি করে ফেলেন। অথবা জোলাপজাতীয় ওষুধ খেয়ে খাবার বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কখনো কখনো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ব্যায়াম করেন। প্রিন্সেস ডায়ানাকেও বুলিমিয়া নার্ভোসা ছিল। গলায় আঙুল দিয়ে জোর করে বমি করার ফলে গলা ফুলে যায়, গলার ভিতর ব্যথা হয়, লালা গ্রন্থিতে সমস্যা হয়। বারবার বমির কারণে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়। খনিজ লবণের অভাব এবং ডিহাইড্রেশনও হতে পারে।
- বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডার: তারাও একসাথে অনেক বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলেন। তবে খাওয়ার পর তারা নিজে থেকে বমি করেন না। ফলে ধীরে ধীরে তাদের ওজন বাড়তে থাকে। যাদের ডায়বেটিস আছে, তাদের ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে ওজন কমানোর কথা মাথায় আসে কিন্তু তারা খাবার গ্রহণ করা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারেন না।
- এভয়েডেন্ট রেস্ট্রিকটিভ ফুড ইনটেক ডিজঅর্ডার: কিছু কিছু খাবারের কথা বারবার মাথায় আসতে থাকে। এই খাবারগুলি নিয়ে তারা নানা রকম কল্পনা করতে থাকেন। কিন্তু সেগুলি সামনে এলে তারা সেই খাবারগুলি খেতে পারেন না, এমনকি সেই সময় সেগুলি পছন্দও করেন না। এই খাবারগুলি চোখের সামনে থাকলে অন্য খাবারও তারা খেতে পারেন না।
সবার আগে রোগী এবং তার পরিবারের লোকজনকে বোঝাতে হবে যে এটি এক ধরনের মানসিক সমস্যা। এই বিষয়ে সময় নিয়ে রোগী এবং তার পরিবারের লোকজনকে রোগের প্রকৃতি, চিকিৎসার ধরন এবং চিকিৎসা না করলে কী হতে পারে, সেগুলি জানাতে হবে। বিশেষ করে যেসব মা-বাবার কিশোর বা যুবক-যুবতী সন্তান আছে, তাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।
সব ধরনের বুলিং, বিশেষ করে ওজন নিয়ে বুলিং প্রতিরোধ করতে হবে।
শারীরিক স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি ঠিক রাখার চেষ্টা করতে হবে। শরীরে যাতে পুষ্টি উপাদান, পানি এবং খনিজ লবণের অভাব
এ জাতীয় আরো খবর...