কৃষিকাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, এখন ক্যাম্পাসে চা বিক্রি করেন জিহাদ
নওগাঁর রানীনগরের এক গ্রামে জন্ম জিহাদ আলীর। বাবা একজন কৃষক, মা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই জিহাদকে সংসারে হাত লাগাতে হত। তিনি নিজের জমিতেই কখনো, আবার অন্যের জমিতেই কখনো কৃষিকাজ করতেন। এমনকি জমিতে উৎপাদিত সবজি নিয়ে বাজারে বিক্রিও করতেন তিনি। "যখন আমি ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে পড়তাম, তখন থেকেই বাবার কাজে সাহায্য করি," বলেন জিহাদ। "পটোল, বেগুন, আলু, পুঁইশাক, লালশাক, শিম, মুলা, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি করতাম। এরপর আমি মাঠে কাজ করাও শুরু করি। যেমন, একদিন স্কুলে যাচ্ছি, হঠাৎ বাবা ফোন দিলেন যে জমিতে গিয়ে সার দিতে হবে। আমিও কাজটা সেরে স্কুলে গেলাম। এমনকি অন্যের জমিতেও কাজ করেছি। এছাড়া বিদ্যুতের তার লাগানোর কাজও করেছি।"
মাধ্যমিক পাস করার পর জিহাদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। তিনি বাড়িঘর ছেড়ে শহরের একটি মেসে উঠে পড়ালেখা চালিয়ে যান। কিন্তু এই আগ্রহ কীভাবে তৈরি হল? জিহাদ বলেন, "আসলে আমার মায়ের ইচ্ছাই বেশি ছিল। তিনি চাইতেন আমি পড়ালেখা করে শহরে উন্নত জীবন কাটাই। তাই তিনি সব বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও আমার পড়ালেখার সব ব্যবস্থা করেছেন। ফলে আমি আমার বাবা-মার পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। এমনকি পড়ালেখার জন্য আমার বাবা জমি বন্ধক রেখেছেন, ফসল বিক্রি করে অথবা ঋণ করে টাকা জোগাড় করেছেন। আমি সেই টাকা খুব হিসাব করে খরচ করতাম। পাঁচ টাকা দিয়ে কিছু কিনে খাওয়ার সময়ও ভাবতাম যে এই টাকাটা বাঁচালে অন্তত একটি কলম কেনা যাবে।"
এই জিহাদ এ বছর রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। তবে সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। এর আগে সংসারের হাল ধরতে নানা কাজ করতেন জিহাদ। এখন পড়ালেখার খরচ জোগাতে চায়ের দোকান দিয়েছেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের স্টেশনে চেয়ার-টেবিল পেতে চা বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলে কাজ। দিনে প্রায় ৭০ কাপ চা বিক্রি করেন তিনি। এতে ২৫০-৩০০ টাকা লাভ হয় বলে তিনি জানিয়েছেন। দোকান প্রসঙ্গে জিহাদ বলেন, "দোকানের পেছনে সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার টাকা আমার নিজের, বাকি টাকা বিআরএফ ইয়ুথ ক্লাব নামের একটি সংস্থা দিয়েছে।"
জিহাদের দোকানের নাম "মার্চেন্ট অফ সিইউ"। গত ২৬ অক্টোবর এটি চালু হয়েছে। দোকানের বিশেষত্ব হলো এখানে ৮ ও ১০ টাকায় ‘উত্তরবঙ্গের ঘরানার’ চা পাওয়া যায়। প্লাস্টিকের বদলে কাগজের কাপে চা পরিবেশন করেন জিহাদ। তিনি জানিয়েছেন যে একজন ছাত্র হিসেবে তিনি পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই কাজটি করছেন। ফলে খরচ কিছুটা বেশি হচ্ছে। তবুও পরিবেশের জন্য এই ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়ার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে বলে তিনি মনে করেন।