তরুণীদের কাছে জনপ্রিয় হোপ মার্কেট
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মিরপুরের এক হোস্টেলে উঠার পর প্রায়ই দেখতাম, ছুটির দিনে বড় দিদিমারা দল বেঁধে হোপ মার্কেটে যাচ্ছেন। তাঁদের দেখে গেলাম আমিও। প্রথমে ভিড়ে কিছুটা বেকায়দা লাগলেও, কয়েক বছর পর এখন মার্কেটের গলিগলিও কাঁচা হয়ে গেছে।
মিরপুর–১০–এর বি ব্লকের ১১ নম্বর রাস্তার পাশে হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনেই অবস্থান হোপ মার্কেটের। প্রায় ১৫ বছর আগে স্কুলের আশপাশে সাধারণ কয়েকটি ফুটপাতের দোকান দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীই ছিল এর প্রথম গ্রাহক। কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যায় বলে খুব দ্রুতই সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে এর নামডাক। ডিসি পাশের অঞ্চল থেকেও আস্তে আস্তে ক্রেতারা আসতে শুরু করে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মেট্রোরেলের আশীর্বাদে, গত দুই বছরে হোপ মার্কেটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
এখন অসংখ্য স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান, ফুটপাত, হকার আর হোপ প্লাজা মিলে গড়ে উঠেছে হোপ মার্কেট। থ্রি-পিস, কুর্তা, জিনস, জুতা, ব্যাগ থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর জিনিসপত্র, বাসনকোসন— সবকিছুই এখানে মিলবে। পাওয়া যায় বাচ্চাদের আরামদায়ক জামাকাপড়ও। শীত এখনও আসেনি, তবু শীতের পোশাকও এসেছে। আর কেনাকাটির ফাঁকে হাঁপিয়ে গেলে আছে নানা রকম স্ট্রিট ফুডের দোকান।
কুর্তা ও কামিজ
৪০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে দামি নকশার তুলো, লিনেন আর জর্জেটের কুর্তা ও কামিজ পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কাফতান, টপ আর লং শার্টও আছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। তুলো, জর্জেট, শিফন ও বাটিকের ওড়না ও স্কার্ফও পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকায়।
প্যান্ট
সাশ্রয়ী মূল্যের ভাল মানের প্যান্টের জন্য অনেকেই হোপ মার্কেটে আসেন। রোজকার গ্যাবার্ডিন, জিনস আর ডেনিমের প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। আরামদায়ক কার্গো প্যান্টও আছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়াও, পায়জামা ও পালাজ্জো কেনা যাচ্ছে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায়।
জুতা
পোশাকের সঙ্গে মানানসই বিভিন্ন ধরনের হিল, স্নিকার্স, স্লিপার জুতা এখানে কেনা যাচ্ছে। দাম পড়বে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা। চুমকি, জরি আর রাজস্থানি কারুকাজ করা নাগরা বা জুত্তি তরুণীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। হালকা আর দেখতে সুন্দর এই নাগরা পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
ব্যাগ
হোপ মার্কেটের আশপাশেই বেশ কয়েকটি ব্যাগের দোকান রয়েছে। সেখানে হাতব্যাগ ও পার্সের বিভিন্ন কালেকশন আছে ১০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এখন তরুণ-তরুণীদের কাছে লম্বা আকৃতির টোটব্যাগ বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন রকম কথা লেখা ও ছবি আঁকা টোটব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
সিরামিকের বাসনকোসন
হোপ মার্কেটের মূলত কয়েকটি ভ্যানে সিরামিকের বিভিন্ন জিনিস বিক্রি হয়। এসব দোকানে নান্দনিক নকশার বাসনকোসন পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের মগ ও কাপ পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। হাফ প্লেট আর প্লেটের দাম শুরু ১০০ টাকা থেকে। ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় মাঝারি আকারের সার্ভিং ডিশ পাওয়া যাচ্ছে। ছোট থেকে মাঝারি আকারের বাটির দাম পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
সাজগোজের জিনিস
হোপ মার্কেটের পাশাপাশি অনেক দোকানেই সাজগোজের বিভিন্ন জিনিসপত্র পাওয়া যায়। দোকানগুলোতে টিপ, কাজল, আইলাইনার, লিপস্টিক, লিপলাইনার পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকায়। গয়নার সংগ্রহও বেশ ভালো। ছোট ছোট কানের টপ পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকায়, ঝুমকার দাম পড়বে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। অ্যান্টিক আর পাথরের মালার দাম পড়বে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা। কাঁচ আর অ্যান্টিকের চুড়ির দাম যথাক্রমে ৫০ টাকা ও ১০০ টাকা।
সপ্তাহের সাত দিনই সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই মার্কেট। বিকেল থেকে সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি জমজমাট থাকে। সপ্তাহে সাত দিন খোলা থাকলেও ছুটির দিনে ভিড় হয় সবচেয়ে বেশি। ভিড় এড়াতে চাইলে ছুটির দিনে এই মার্কেটে না যাওয়াই ভালো। ঠিকমত দরদাম করতে পারলে হোপ মার্কেট থেকে বেশ কম দামে জিনিস কিনে ফিরতে পারবেন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেহেতু এই মার্কেটে প্রায়ই ভিড় হয়, সেজন্য ছোট শিশুদের এখানে না আনাই ভালো।