৫২ ফিচার ।।
“ আমার কেউ নেই বলে কি আমার আমি’’
সংগীত শিল্পী মল্লিকা ইদানিং মঞ্চ ও মিডিয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) তে সুরবিচিত্রা অনুষ্ঠানে উর্দু গান, গাজী টেলিভিশনে ফোক ফিউশন অনুষ্ঠানে এবং মাই টিভিতে একক সংগীতানুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন। এর আগে এনটিভিতে একটি লাইভ এবং দেশটিভি ও আরটিভিতে গান করেন। সম্প্রতি গুলশানের রাওয়া ক্লাবে তার একটি একক সংগীত সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মল্লিকা হারানো দিনের গান পরিবেশন ছাড়াও গজল ও ঠুমরি পরিবেশন করে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেন।
সংগীত জীবনে কীভাবে আসলেন সেই গল্প জানতে চাইলে নবীন প্রতিভাবান সংগীত শিল্পী মল্লিকা জানালেন গানের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার এক ছায়াঘেরা গ্রামে জন্ম। বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকায় এসে বসবাস, পড়াশোনা এবং গান বাজনা। মল্লিকার বাবা মোঃ আনোয়ার হোসেন আর মা সালমা বেগম দু’জনার আদরের কন্যা মল্লিকার গানের প্রতি টান সেই ছেলেবেলা থেকেই।
মূলত মল্লিকার মা খুবই সংগীত প্রিয় মানুষ তাই গানের প্রতি মেয়ের আগ্রহ দেখে তাকে একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যান। প্রথমদিকে মল্লিক রেডিও টিভি ও ক্যাসেট প্লেয়ারের গান শুনে শুনে নিজের কণ্ঠে পুরনো দিনের সেই অমর শিল্পী পারভীন সুলতানা, সন্ধ্যা, লতাজীর গাওয়া গান তুলতেন। তাইতো সোনালী যুগের গানের মধ্যে মল্লিকা এতোটাই মগ্ন ছিলেন যে, ভারতের সাগরিকা, এইচএমভি এবং বাংলাদেশের গানের ডালি, সংগীতা ও ইউনিভার্সাল মিউজিক থেকে মল্লিকার এ পর্যন্ত ৮টি একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে শুধুমাত্র ভারতীয় আধুনিক বাংলা গান নিয়ে।
মল্লিকার আধুনিক সর্বপ্রথম গানে হাতেখড়ি খন্দকার ফারুক আহমেদের কাছে। স্কুলে পড়াকালীন ৫-৬ বছর তার কাছে আধুনিক ও ক্ল্যাসিক্যাল গানে শিক্ষা নেন। তার পর ভারতে শাস্ত্রীয় সংগীতের পণ্ডিত সুনীল চক্রবর্তীর কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেয়া শুরু করেন। এখনো পর্যন্ত তাঁর কাছে সংগীত শিক্ষা গ্রহণ করছেন। সেক্ষেত্রে মল্লিকা বছরে তিন থেকে চার মাস ভারতে অবস্থান করেন। আবার কখনোবা ওস্তাদজীও ঢাকায় এসে কিছুদিন সংগীতে তালিম দিয়ে যান তাকে। সংগীত নিয়ে মল্লিকার সেই ছোটবেলা থেকেই সাধনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেনÑ সংগীতের পথ খুব দীর্ঘ। এ পথে যতোদূর যাওয়া যায় ততোই নতুন নতুন সুর, তাল, ছন্দ সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করা যায়।
‘আর কত রাত জেগে থাকবো’ নামে ২০০৪ সালে মল্লিকা তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করেন। পুরোনো দিনের অমর গানে সাজানো এই অ্যালবামটি ছাড়া একই ঘরানার গান নিয়ে মল্লিকার আরো যে কয়েকটি অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে তার মধ্যে ”সন্ধ্যাবেলা তুমি আমি দু’জনে, আমি যে কে তোমার, ভালবাসা চিরদিন অবুঝ পাখি, কেন ডাকো এবং মনের হদিশ অন্যতম। সম্প্রতি শিল্পী মল্লিকার সম্পূর্ণ মৌলিক গানের প্রথম একক অ্যালবাম ‘প্রেমের দীর্ঘপথ’ প্রকাশিত হয়েছে। লেজার ভিশন থেকে প্রকাশিত এই অ্যালবামটি মোট ৭টি গানে সাজানো। দেশের বর্তমান সময়ের প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা, সুর ও সংগীতে মল্লিকার প্রেমের দীর্ঘপথে গাওয়া গানগুলোর শিরোনাম হলো আমার কেউ নেই বলে কি, বৃষ্টি ঝরো মুষল ধারায়, হাতে রাখে অধরা হাত, হে বীর, কখনো রোদ, উদাসী হাওয়া এবং ভগ্ন হৃদয়। অনেকটা শাস্ত্রীয় সুরে করা গানগুলো অপূর্ব ভঙ্গিমায় বেশ প্রানবন্তু ভাবেই গেয়েছেন মল্লিকা।
একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে মল্লিকা সফলতার দিকে বেশ এগিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের বিশেষ গ্রেডের শিল্পী তিনি ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সবকটি বেসরকারী স্যাটেলাইট চ্যানেলেও একক লাইভ সংগীত পরিবেশন করেছেন। নিয়মিত বিভিন্ন মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করে যাচ্ছেন। দেশের বাইরে ভারত ও থাইল্যান্ডে একাধিক স্টেজ শোতে পারফর্ম করেছেন। আগামী মাসে কাতারে একটি অনুষ্ঠানে গান করার জন্য যাচ্ছেন। শাস্ত্রীয় সংগীতের বিভিন্ন রাগের ওপর বেশ ভালো ধারণা রয়েছে মল্লিকার। নজরুল সংগীত, ঠুমরি, গজল, ভজন ও টুকটুক কীর্তনও গেয়ে থাকেন তিনি। নিয়মিত রেওয়াজ করেন। অবসরেও গান নিয়ে মগ্ন থাকতে ভালো লাগে।
মল্লিকা তার সংগীতে আদর্শ মনে করেন, যাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, যাঁর সব কাজই মল্লিকার মন ছুঁয়ে যায় তিনি হলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় শিল্পী ‘হামে তুমসে পেয়ার কিতনা’-এর মূল গায়িকা পারভীন সুলতানা। সংগীত নিয়ে মল্লিকার ভবিষ্যত স্বপ্ন ১০টি রাগ রাগিণীর ওপর কাজ করা এবং এমন কিছু গান করে যাওয়া, যার মাধ্যমে তিনি মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকবেন তার কাজের মাঝে। শুদ্ধ সংগীতের অনিন্দ্য পথের যাত্রী সংগীত শিল্পী মল্লিকার এগিয়ে চলা আরো সুদীর্ঘ হোক এ প্রত্যাশা আমাদেরও।