রোজ চিঠি দাও, চিঠি দাও
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘শেষ চিঠি’ কবিতায় বলেছেন, "চিঠিখানি হাতে নিয়ে তেমনি পড়ল মনে অনেক কথা এক নিমেষে।" ইন্টারনেট, ই-মেইলের যুগে এখন তো চিঠি লেখার চলটাই ভুলে গেছেন অনেকে। চিঠি লেখার সেই স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে ‘চিঠি ডটমি’ নামে একটি অ্যাপ। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাজিদ হাসানের বানানো এই অ্যাপটিতে ব্যবহারকারীরা নিজেদের নাম-পরিচয় গোপন রেখে অন্যদের চিঠি লিখতে পারেন। এর মধ্যেই ফেসবুকসহ নানা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অ্যাপটির পোস্টে কয়েকদিন ধরেই চিঠিপত্র ছড়িয়ে পড়ছে। বেশ সাড়া ফেলেছে চিঠি ডটমি।
চিঠি ডটমি অ্যাপ দিয়ে পুরনোদিনের বাদামি রঙের কাগজের মতোই চিঠি লেখা যায়, অর্থাৎ ছবির আকারে চিঠি তৈরি হয়ে যায়। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা নিজের মতো করে নানা রকম চিঠি লিখে অনলাইনে প্রকাশ করছেন। পুরনোদিনের চিঠির মতো দেখতে এই ডিজিটাল চিঠিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে। তরুণ পেশাজীবী সুদীপ্ত বিশ্বাস চিঠি ডটমি অ্যাপে লিখা অনেক চিঠি পড়েছেন। তিনি বলেন, "মানুষ তো নিজেকে জানতে চায়। অন্যরা কী ভাবছে, তা পড়তে চায়। এখন আমাদের অনেকেরই নাম-পরিচয় দিয়ে কাউকে কিছু বলার আগ্রহ নেই। সেখানে চিঠি ডটমিতে নাম-পরিচয় না দিয়েই অন্যকে চিঠি লেখা যায়। ভালো-মন্দ সবই লেখা যায় চিঠি অ্যাপে। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, এই অ্যাপে চিঠি লেখার সময় চিঠির মতো বাংলা ফন্ট ব্যবহার করা যায়, যা অনেকটা হাতে লেখা চিঠির অনুভূতি দেয়। আমি নিজেও অনেক চিঠি লিখেছি, লেখার বেশ ভালো অভিজ্ঞতা হচ্ছে। চিঠিতে কেউ জিজ্ঞেস করেছে কেমন আছি, কেউ প্রথম প্রেমের খোঁজ নিয়েছে, কেউ জিজ্ঞেস করেছে কী করছি। কেউ কেউ শুভেচ্ছা জানিয়েছে, কেউ আবার পুরনোদিনের কোনো স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। অনেকের চিঠি পড়ে বুঝতে পারছি কে লিখেছে; তবে মজা নষ্ট না করার জন্য পরিচয় প্রকাশ করছি না।"
কবি রিমঝিম আহমেদ থাকেন চট্টগ্রামে। বেশ আগ্রহ নিয়ে চিঠি ডটমি অ্যাপ ব্যবহার করছেন। অপরিচিত বা পরিচিত লোকেদের নাম-পরিচয়হীন চিঠি পড়ার জন্য এই অ্যাপ ব্যবহার করছেন তিনি। তিনি বলেন, "আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে অ্যাপটি ব্যবহার করছি। অনেক অপরিচিত মানুষ আমাকে লিখছে, বিষয়টি বেশ উপভোগ করছি। অন্যদের ভালো কথা, আমাকে নিয়ে দারুণ সব আশার কথা পড়ে মুগ্ধ হচ্ছি। সেই সব লেখা আমি আবার ফেসবুকেও প্রকাশ করছি। আমরা মানুষ, আমরা ভালো কথার জন্য বাঁচি, ভালো কথা শুনতে চাই। নিজের জন্য ইতিবাচক কথা শুনেই আমাদের বেঁচে থাকাটা রঙিন হয়। চিঠি অ্যাপে অনেকেই আমাকে লিখেছে, প্রতিটি লেখাই যেন আমাকে আশা দেখাচ্ছে। আশার কথা পড়ছি নানা লেখায়। মন খারাপের সময় তো আমরা ভালো কথা শুনতে চাই, নিজেকে অনুপ্রাণিত করে এমন কথা খুঁজি আমরা। চিঠি ডটমি অ্যাপে আমি এমন শব্দের খোঁজ পেয়েছি। আমার মন খারাপের সময়, প্রতীক্ষার সময় চিঠি পাওয়ার মতো প্রতিটি লেখাই আমাকে অনুপ্রাণিত করছে। নাম-পরিচয় গোপন রেখেই অনেকেই লিখছেন, খারাপ বা সমালোচনার কথা লিখতে পারেন অনেকেই। আশ্চর্য হচ্ছি, সবাই ইতিবাচক ভাবনা, কবিতা, জীবনবোধের নানা ভাব লিখছেন। আমাকে নিয়ে মানুষের এমন কথা আমাকে মুগ্ধ করছে। মোবাইলে "হাতে লেখা" এই রকম চিঠি পেয়ে আমি সত্যিই খুশি।"
৮ নভেম্বর গুগল প্লে স্টোরে প্রকাশ করা হয়েছে চিঠি ডটমি নামে এই অ্যাপটি। এর মধ্যেই প্রায় ৫০ হাজার বার অ্যাপটি ডাউনলোড করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ১০ লাখেরও বেশি চিঠি প্রকাশ বা পাঠানো হয়েছে এই অ্যাপের মাধ্যমে। এর নির্মাতা সাজিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেছেন, "আমার বড় ভাই ক্যাডেট কলেজে পড়তেন। তাই আমি ছোটবেলা থেকেই চিঠি লেখা ও চিঠি পাওয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত। আমি আমার আত্মীয়স্বজন, মামা-মামিকে তখন চিঠি লিখতাম। এখন চিঠি বিষয়টা একেবারেই হারিয়ে গেছে। আমি ছোটবেলার চিঠি লেখার বিষয়টি মাথায় রেখেই চিঠি ডটমি তৈরি করেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম, বন্ধুদের জন্য বানাব অ্যাপটা। সবাই বাহবা দেবে। গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপটি প্রকাশের ১০ দিনের মধ্যে এমন সাড়া পাওয়া যাবে, তা কল্পনাতেও ছিল না। বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাভাষীরাও অ্যাপটি ব্যবহার করছেন। অনেকেই তাঁদের শৈশবের চিঠি লেখার দিনে ফিরে গেছেন, বিষয়টি নির্মাতা হিসেবে বেশ উপভোগ করছি। আমি এর আগে লিখন নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছ