কুমিল্লা টাউন হল কুক্ষিগত করে বাহারের দুর্নীতি
কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন, যা টাউন হল নামেই পরিচিত, কেবল একটি স্থাপত্যকলার নিদর্শন নয়, বরং শহরের গৌরব ও সংস্কৃতির প্রতীক। এই টাউন হলকে দীর্ঘদিন ধরে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন সাবেক সাংসদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার।
স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী, বাহার ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতোই টাউন হল ব্যবহার করেছেন। আর টাউন হলের পাশে অবৈধভাবে একটি মার্কেট দখল করে দীর্ঘ ২২ বছর অর্থ লুট করেছেন তিনি।
৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধীরে ধীরে বাহারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হতে থাকে টাউন হল। অবশেষে ২০শে নভেম্বর রাতে টাউন হল আনুষ্ঠানিকভাবে বাহারের দখলমুক্ত হয়।
এদিন টাউন হলের সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত একটি অতিরিক্ত সাধারণ সভায় টাউন হলের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার কমিটি বিলুপ্তির সিদ্ধান্তের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেন। সভায় বাহারের দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান সদস্যরা।
সভার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল টাউন হলের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে অবস্থিত ‘কুমিল্লা টাউন হল সুপার মার্কেট’, যা ‘বাহার মার্কেট’ নামে পরিচিত।
জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার সভা শেষে জানান, দীর্ঘদিন পর কুমিল্লা টাউন হলের পুনরুজ্জীবন হয়েছে। বর্তমান ১৯ সদস্যের কমিটি কার্যকর নয় বলে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়া সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা, সদস্যতার নবায়ন ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি এবং গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য উপকমিটি গঠন করা হবে।
তিনি আরও জানান, ১৯৯২ সালের একটি ইজারা চুক্তি অনুযায়ী, আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট সাপ্লাইয়ার ১০ বছরের জন্য টাউন হল সুপার মার্কেটের মালিক হয়েছিল। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বাহারকে নিজের টাকায় মার্কেট তৈরি করতে হবে এবং ১০ বছরের ভাড়া নেওয়ার পর কিছু অংশ টাউন হলকে দিতে হবে। ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর এই চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে এবং মার্কেটের মালিক হবে টাউন হল। সে হিসাবে ২০০২ সালে এই চুক্তি শেষ হয়েছে।
তবে গত ২২ বছর ধরে নোটারি পাবলিক করা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অবৈধভাবে এই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো অর্থ টাউন হলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে এখন থেকে ওই মার্কেটের মালিক হবে টাউন হল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাহার মার্কেটের নিচতলায় প্রায় ১০০টি দোকান রয়েছে। নির্মাণের পরই বাহার এই দোকানগুলোর পজেশন বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে প্রতিটি দোকান থেকে ভাড়া হিসেবে ১,০০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ৪২টি বড় দোকান। এগুলোর পজেশন বিক্রি করে বাহার প্রতি মাসে একটি শাটারের জন্য ১,৬০০ টাকা এবং দুটি শাটারের জন্য ৩,২০০ টাকা ভাড়া আদায় করেছেন। আর তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় তার মেয়ে আয়মান বাহার সোনালীর নামে রয়েছে ‘আবাসিক হোটেল সোনালী’। এই হোটেলের ২৮টি কক্ষ থেকে প্রতিদিন অন্তত ৪০,০০০ টাকা এবং মাসে প্রায় ১২ লাখ টাকা আয় হতো বাহারের।
এভাবে মার্কেট থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা লুটে নিয়েও টাউন হলের অ্যাকাউন্টে বাহার মাসে মাত্র ২২,৫০০ টাকা জমা দিতেন। তার এই লুটপাটের কারণে ঐতিহাসিক টাউন হলটি এখন ধুঁকছে।
মার্কেটের অন্তত পাঁচজন ব্যবসায়ী জানান, ২০ শতক জমির ওপর নির্মিত ‘বাহার মার্কেট’ থেকে বাহারের প্রতি মাসে আয় হতো ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা। নিচতলার দোকানগুলোর পজেশন তিনি শুরুর দিকে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। দ্বিতীয় তলার দোকানগুলো তিনি ৫ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।
অতিরিক্ত সাধারণ সভায় টাউন হলের সদস্যদের মধ্যে অন্তত ১৩ জন বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা উল্লেখ করেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাহার কখনো সাধারণ সভা ডাকেননি। তিনি সব সময় নিজের লোক দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করেছেন এবং নতুন কাউকে সদস্য হতে দেননি। বাহার টাউন হলের ঐতিহ্যবাহী ভবনটি ভেঙে আধুনিক কমপ্লেক্স করতে চেয়েছিলেন।
বক্তারা বাহারের দুর্নীতির তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। কেউ কেউ বাহারকে ‘দানব’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা বাহার মার্কেটকে টাউন হলের কল