৫২ আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
আমেরিকা ও কানাডা ইরানের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চূড়ান্ত পরমাণু চুক্তি সইয়ের জন্য যখন ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু আলোচনা চলছে ঠিক তখন এ দু’টি দেশ এ সিদ্ধান্তের কথা জানালো। আমেরিকায় বিদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী বিষয়ক কমিশন জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আমেরিকা ও কানাডার এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারজিয়ে আফখাম বলেছেন, শিক্ষা গ্রহণ মানুষের মৌলিক অধিকার এবং এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক নয় এবং তা বৈষম্য। তিনি বলেন, মেডিকেল শিক্ষার বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, এর সঙ্গে মানুষের সুস্থতা ও জীবন বাঁচানোর সম্পর্ক রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরো বলেছেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতা তুলে নেয়ার জন্য তার দেশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং আমরা আশা করি যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থার অবসান ঘটবে।
প্রায় এক বছর আগেও আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকার কারণে তারা ইঞ্জিনিয়ারিং ও সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে ইরানি ছাত্রদেরকে ভর্তি করতে পারবে না। ২০১২ সালে প্রণীত আমেরিকার একটি আইনের অজুহাত দিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরানি ছাত্র ভর্তি না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। ওই আইন অনুযায়ী পরমাণু জ্বালানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগে বা জ্বালানি গবেষণা ক্ষেত্রে ইরানি কোনো ছাত্রকে ভর্তি করা নিষিদ্ধ। সরকারের এ সিদ্ধান্তের পরপরই আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এর বিরোধিতা করেছিল।
আমেরিকা কয়েক বছরে ইরানের শিক্ষা ও গবেষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিভাগে নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে ইরানের অগ্রগতি ও উন্নয়ন থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশ্চাত্যের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে এমনকি ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞরাও আমেরিকা ও কানাডাসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে কোনো সেমিনারেও যোগ দিতে পারছেন না। এ ছাড়া, ইরানের গবেষণালব্ধ কোনো নিবন্ধও আন্তর্জাতিক প্রকাশনাগুলোতে প্রকাশে বাধা দেয়া হচ্ছে। এসব করা হচ্ছে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকার অজুহাতে এবং এর উদ্দেশ্য ইরানের অর্থনীতি ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়া।
ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও ইউরোপের এ ধরণের আচরণ সুইজারল্যান্ডের লুজান বিবৃতির পরিপন্থী। তারা নিষেধাজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে পরমাণু আলোচনাকে নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এতোসব ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও সব ক্ষেত্রে ইরানের অগ্রগতি থেমে নেই। আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে ইরানের অবস্থান রয়েছে অনেক উপরে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানেও ইরানের সাফল্য বিস্ময়কর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা যতই ইরান বিরোধী অযৌক্তিক পদক্ষেপ নিচ্ছে তাতে প্রমাণিত হয় ততোই তারা পরমাণু সমঝোতা থেকেও দূরে সরে যাচ্ছে। আমেরিকা এমন সময় ইরানের মেডিকেল ছাত্রদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিল যখন জেনেভায় ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের সমঝোতার পর আর কোনো নিষেধাজ্ঞা চাপানো হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।