৫২ জাতীয় ডেস্ক ।।
যুক্তরাজ্যকে একটি মহান দেশ হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ব্রিটেনের আরো সহায়তা কামনা করেছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করছে। তবুও ব্রিটেনের কাছ থেকে আরো সহায়তা আমাদের প্রয়োজন। ব্রিটেন একটি মহান দেশ এবং দীর্ঘদিন ধরে তারা আমাদের সহায়তা দিয়ে আসছে। আমি আশা করছি, তারা বাংলাদেশের জনগণের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে।”
সোমবার বিকেলে বৃটিশ পার্লামেন্টের কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ), যুক্তরাজ্য শাখার কার্যালয়ে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করছিলেন। বাংলাদেশ সংক্রান্ত অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান কিথ ভাজ বৃটিশ পার্লামেন্টে প্রথমবারের মত নির্বাচিত আইন প্রণেতাদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, লেবার পার্টির এমপি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক এবং বৃটিশ হাউজ অব কমন্সের বেশকিছু সদস্য অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, বৃটেনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. আবদুল হান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রুশনারা আলী, ড. রূপা হক, জিমি ফিটজপ্যাট্রিক, এ্যান মেইন, কেট ওসামার, ক্যাথরিন ওয়েস্ট, জোনাথান শ’, এ্যান্ডি স্লেটার, ব্যারোনেজ পলা উদ্দিন সহ প্রায় ৩০ জন এমপি এবং সিপিএ যুক্তরাজ্য শাখার প্রধান নির্বাহী এন্ড্রু টাগি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বৃটেনকে বাংলাদেশের একটি প্রধান উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, “বাংলাদেশ ও বৃটেন দু’দেশের পারস্পরিক কল্যাণে এক সঙ্গে কাজ করে যাবে।”
দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সুস্পষ্ট যে, আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ সকল আর্থ-সামাজিক খাতে ভাল অগ্রগতি লাভ করছে। আমরা নেপাল, ভূটান ও ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেছি এবং বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোরের মাধ্যমে চীন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “চিরদিনের জন্য এ অঞ্চল থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করার একটি অভিন্ন লক্ষ্য আমাদের রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে আমরা সকল সমস্যা সমাধান করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য নির্মূল করা এবং জনগণকে সকল মৌলিক সুবিধা প্রদান করা।”
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ইস্যুতে বৃটিশ পার্লামেন্ট সদস্যের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের মত সুবিধাবঞ্চিত জনগণের জন্য সবসময় কাজ করছে।
তিনি বলেন, “শ্রমিকরা যাতে তাদের কর্মস্থলে সুষ্ঠু পরিবেশ পায় সেলক্ষ্যে সরকার যতœ নিতে শুরু করেছে।”
দারিদ্র্য হার হ্রাসের লক্ষ্যে সরকারের প্রয়াসের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান সরকার এ মেয়াদে দারিদ্র্য হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়।
তিনি বলেন, দারিদ্র্য হার ইতোমধ্যে ২২.৭ শতাংশে নেমে এসেছে এবং আমরা আগামী সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে চাই। আমি দৃঢ় আস্থাশীল যে, আমরা এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।”
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, তার পূর্ববর্তী সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করার সময়টি ছিল কঠিন। কারণ, তখন বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল।
তিনি বলেন, “তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন ছিল। কিন্তু আমরা ভাগ্যবান ছিলাম যে, আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৬ শতাংশের বেশি রাখতে পেরেছিলাম। চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার হচ্ছে ৬.৫১ শতাংশ।”
প্রথমবার নির্বাচিত ব্রিটিশ এমপিদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা ব্যারোনেস ও পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, এটি একটি বিরাট কাজ এবং আমি জানি, আপনারা একটি উন্নত দেশের এবং আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশের।
এ ক্ষেত্রে একটি বিরাট ব্যবধান রয়েছে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু আপনারা ভাগ্যবান যে, আপনারা গণতন্ত্র ব্যবস্থা উপভোগ করছেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরাও ওয়েস্টমিনস্টার ধরনের গণতন্ত্র অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। এটি একটি কঠিন কাজ। তা সত্ত্বেও আমরা এ লক্ষ্যে ক্রমান্বয়ে অগ্রগতি লাভ করছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে দেশে ফিরে যেতে বাধা দিয়েছিল। তখন আমি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সকল দল ও এমপিদের সমর্থন করেছিলাম।”
আজ বৃটিশ পার্লামেন্টে তার যাওয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, তিনি অনেকবার এই ভবনে এবং সিপিএ যুক্তরাজ্য শাখার কার্যালয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এই ভবনে এবং সিপিএ যুক্তরাজ্য শাখার কার্যালয়ে আমি অনেক সময় ব্যয় করেছি।
টিউলিপ সিদ্দিকের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিউলিপ যখন জন্ম নেন তখন তিনি লন্ডনেই ছিলেন। আমার এখনো মনে আছে যে, আমি প্রথমবার তাকে ‘টিউলিপ’ ফুলের মতোই দেখেছিলাম। এখন সে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। আমি তার জন্য গর্বিত এবং তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
প্রথমবার যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়ার পর তার অনুভূতি ব্যক্ত করে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন এলাকা থেকে লেবার পার্টির এমপি নির্বাচিত হওয়া একটি বিরাট সম্মানের বিষয়।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বেশকিছু সংখ্যক মহিলা নির্বাচিত হওয়ায় আমরা গর্বিত। আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারি। লেবার পার্টির এমপি বলেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী একজন মহিলা, বিরোধী দলীয় নেতাও একজন মহিলা এবং সরকারের সর্বোচ্চ পাঁচটি পদেও মহিলা রয়েছেন।
টিউলিপ বলেন, আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে অত্যন্ত গর্বিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি এবং আপনি গত নির্বাচনে সফল হওয়ার ব্যাপারে আমাকে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে এ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার জন্য বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অনুষ্ঠানে জয় বলেন, বাংলাদেশ আইটি খাতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন গ্রামগুলো ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত।
প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে।
স্বাগত বক্তৃতায় কিথভাজ একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাহসের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। তাকে এ অনুষ্ঠানে পাওয়া একটি বিরাট সম্মানের বিষয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিতভাবেই একজন গর্বিত মহিলা। তিনি অন্যদের জন্য নিজেই অনেক নজির স্থাপন করেছেন।
কনজারভেটিভ পার্টির এমপি এ্যান মেইন বক্তৃতাকালে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃটিশ পার্লামেন্টে পৌঁছলে হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকাউ স্বাগত জানান। সূত্র: বাসস