নবাগত মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা নিশ্চিত করল টাইগাররা। শর্ত ছিল ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের আটে থাকতে হবে। এ জন্য হাতে ছিল ভারতের সঙ্গে তিন ম্যাচ এবং আসছে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তিন ম্যাচ, মোট ৬টি ওয়ানডে। এই ছয়টির মধ্যে দুটো জিতলেই হতো। দ্বিতীয় ওয়ানডেও ভারতে হারিয়ে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাল মাশরাফি-সাকিবরা।
রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে ৩টায় মিরপুর স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা ভারতকে মাত্র ২০০ রানে অলআউট করেছিল বাংলাদেশ। ৬ উইকেট নিয়ে প্রায় একাই ভারতকে ধসিয়ে দিয়েছেন তরুণ মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম ওভারেই তিনি রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দিলেও শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলির ৭৪ রানের জুটিতে ভর করে ২ উইকেটে ১০৯ রানে পৌঁছে যায় ভারত। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের ১০ ওভার বল করা নাসির হোসেন কোহলি ও ধাওয়ানকে ফেরানোর পর রুবেল হোসেন প্রথমবারের মতো শূন্য রানে ফেরান অম্বাতি রাইডুকে।
নাসির, রুবেলের দারুণ বোলিংয়ে ১১০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। সেখান থেকে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও সুরেশ রায়নার ৫৩ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে অতিথিরা। প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে ৩২ রানে এক উইকেট নেয়া মুস্তাফিজ দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেন ভয়ঙ্কার হয়ে। দ্বিতীয় স্পেলে ১১ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে গুড়িয়ে দেন এই বাঁহাতি পেসার। তার এই স্পেলেই দিক হারায় সফরকারীরা।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র প্রথম ওভারে (৩৬তম) দারুণ এক কাটারে রায়নাকে বিদায় করেন মুস্তাফিজ। এক ওভার বিরতির পর দুর্দান্ত দুই বলে ফিরিয়ে দেন ধোনি ও অক্ষর প্যাটেলকে। মুস্তাফিজের স্লোয়ারে পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে সৌম্যকে সহজ ক্যাচ দেন ভারতের ব্যাটিং ভরসা ধোনি আর এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন দলে ফেরা অক্ষর। মুস্তাফিজ ও মাশরাফির চমৎকার বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ১৭ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায় ভারত। এই সময়েই ম্যাচ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় বাংলাদেশ।
হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেয়া অশ্বিনকে পরের ওভারেই ফেরান মুস্তাফিজ। বৃষ্টির কারণে দুই ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার পর ৪৭ ওভারে নেমে আসে ম্যাচের আকার। আবার শুরু হলে মাত্র ৭ বল টেকে ভারতের ইনিংস। নিজের শেষ বলটি করতে আসেন মুস্তাফিজ। এই বলে রবিন্দ্র জাদেজাকে বোল্ড করে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। এরপর ভুবনেশ্বর কুমারের উইকেটটি নেন রুবেল হোসেন। ভারত ৪৫ ওভারে ২০০ রানে অলআউট হলে ডি/এল পদ্ধতিতে বাংলাদেশের লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ২০০ রান। ৫৪ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
প্রথম ওয়ানডেতে দলের ৭৯ রানের জয়ে ৫০ রানে ৫ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। এবার ৬ উইকেট নিতে খরচ করেন ৪৩ রান। এছাড়া, নাসির ও রুবেল দুটি করে উইকেট নেন।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে উদ্বোধন করতে নামেন আগের ম্যচের সফল জুটি তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। দলীয় ৩৪ রানের মাথায় টাইগাররা তাদের প্রথম উইকেট হারায়। ব্যক্তিগত ১৩ রানে ধাওয়াল কুলকার্নির বলে শিখর ধাওয়ানের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল।
দলীয় ৩৪ রানের মাথায় টাইগারদের ওপেনার তামিম ফিরে গেলেও দলকে দারুণভাবে এগিয়ে নিতে থাকেন সৌম্য সরকার। তবে, ১৭তম ওভারে অশ্বিনের একটি নিচু হওয়া বলে এলবি’র ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন সৌম্য। আউট হওয়ার আগে তিনি ব্যক্তিগত ৩৪ রান করেন। লিটনের সঙ্গে ৫২ রানের জুটিও গড়েন ৪৭ বল মোকাবেলা করে দুটি চার আর একটি ছক্কা হাঁকানো সৌম্য।
এরপর বেশি সময় থাকতে পারেননি লিটন কুমার। ব্যক্তিগত ৩৬ রান করে প্যাটেলের বলে উইকেটের পেছনে ধোনির গ্লাভসবন্দি হন তিনি। আউট হওয়ার আগে লিটন ৪১ বল মোকাবেলা করে ৫টি চার হাঁকান।
তামিম, সৌম্য আর লিটন কুমার ফিরে গেলেও টাইগারদের রানের চাকা সচল রাখেন সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। তবে, ইনিংসের ৩০তম ওভারে রান আউট হয়ে ফেরেন মুশফিক। ৩৪ বলে তিনটি চার আর একটি ছয়ে ৩১ রান করেন মুশফিক। সাকিব ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩০তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন। আর সাব্বির করেন অপরাজিত ২২ রান।
ভারতের বিপক্ষে চলমান তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতেই ৭৯ রানের দাপুটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ৩০৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে অভিষিক্ত মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তোপে ২২৮ রানেই গুটিয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। তাসকিন আহমেদের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতেই পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন মুস্তাফিজ। পরপর দুই ম্যাচে ১১টি উইকেট শিকার করে তিনি বিশ্বরেকর্ড গড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন।
এদিকে, ভারতের বিপক্ষে তিনম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে জয়ী হওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার এক অভিনন্দন বার্তায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাশাপাশি দলের ম্যানেজার, কোচ, ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে সরকারের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং খেলোয়াড়দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ বিশ্বের বুকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আগামীতেও বিজয়ের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।