বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন,’আজকে দেশ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে নেই। পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ বলছে আমরা এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছি। সেই পুলিশ কী হাসিনার কথা শুনবে?’ তিনি বলেন, ‘এর আগে আওয়ামী লীগ ২২ বছর ক্ষমতায় আসতে পারেনি। এবার ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলে কত দিন যে লাগে কে জানে। আওয়ামী লীগের অবস্থা হবে মুসলিম লীগের মতো। আওয়ামী লীগ থাকবে না। ভেঙে টুকরো টুকরো হবে।‘
মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে নোয়াখালী জেলার নবনির্বাচিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ সব মন্তব্য করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জঙ্গি তৈরি করে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত। যখন তাদের অবস্থা খারাপ হয় তখন তারা বিদেশীদের দেখানোর জন্য বলে যে, ‘আমরা জঙ্গি ধরেছি। আমাদের ছাড়া কেউ জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না’।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে যশোরের সেই উদীচী সমাবেশে বোমা হামলা। তখন কে ছিল ক্ষমতায়? এই আওয়ামী লীগই ছিল। তারপর পল্টনে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। রমনার বটমূলে বোমা হামলা হয়েছে। গোপালগঞ্জে গির্জায় বোমা হামলায় ২০ জন মারা যায়। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। যত ঘটনা ঘটেছে সব আওয়ামী লীগের সময়ে। বিএনপির সময়ে না।’
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘জঙ্গিগুলো একটাকেও কি আওয়ামী লীগ ধরেছে? তাও তো ধরে নাই। ধরবে কেন এরা তো তাদেরই লোক।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে আনসারুল্লাহ-রহমাতুল্লাহ ধরেছি। জঙ্গি তৈরি করে তারাই এ সব নাম দেয়। শেখ হাসিনা শুধু স্বৈরাচার নন, খুন-হত্যা ও গুমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ইলিয়াস আলীসহ বিএনপির অনেক নেতাকে তারা গুম করেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘নিরপেক্ষ ভোট হলে বিএনপি যে কত ভোট পাবে আর আওয়ামী লীগের অবস্থা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা তারা জানে। সেইজন্য তারা নিরপেক্ষ ভোটে যেতে চায় না।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেই হবে। ভবিষ্যতে দেশে সেই নির্বাচনই হবে, ইনশা আল্লাহ। ধৈর্য ধরুন। সময় আর বেশি নেই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আছে, থাকবে, শক্তিশালী আছে। বিএনপি কখনও ভাঙবে না। বিএনপির মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে। দল পুর্নগঠন এটা প্রক্রিয়া। অনেকেই বলে, বিএনপি শেষ হয়ে গেছে। বিএনপি এগুতে পারছে না। এটা ঠিক নয়। মহাসচিবসহ নেতারা জেলে আছেন। আমরা সময়ের অপেক্ষায় আছি।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘কঠিন সময় পার করছি। দেশে কোনো সরকার নেই। আজকে যারা নিজেদেরকে সরকার দাবি করে তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় বসেছে, জোর করে ক্ষমতায় আছে। ১৫৪ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত। আর বাকি যে ক’জন আছে ওখানে ৫ ভাগের কম ভোট পড়েছে। এদের লোকজন ভোট দিতে যায়নি। হাসিনা-রওশন এরাও নির্বাচিত নয়, স্পিকারও তাই।’
বিএনপি প্রধান বলেন, ‘গণতন্ত্র না থাকলে, আইনের শাসন থাকে না। দেশ আজকে কঠিন সময়ে আছে। তাই বলে আমরা বসে থাকতে পারি না। কারণ বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস সব সময় ছিল বিএনপি এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে।’
আইনজীবীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদেরকে বার কাউন্সিলে বিএনপির পূর্ণপ্যানেল জয়ী করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে বলতে হবে, তোমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে। জনগণ তোমাদের দেখতে চায় না।’
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া প্রমুখ।