এম,এ কাশমে
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের হিড়িক পড়েছে। গ্যাসের লোড পরীক্ষা না করে পাইপ বসানো হচ্ছে। কোনো রকম অনুমতি ছাড়া এবং নিন্মমানের পাইপের সাহায্যে সংযোগগুলো স্থাপন করা হয়। ইতিমধ্যেই জ্বলছে কয়েক লাখ চুলা। এতে সরকার প্রতিমাসে রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় কোটি টাকা।
অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারনে শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার এলাকার দাদা গ্র“পের একটি প্রতিষ্ঠান শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডাইরি করেছেন যার নং ১১৬। এক শ্রেণীর দালালচক্র আগ্রহী দের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে গ্যাস সংযোগ দিয়ে চলছে। ফলে বৈধ সংযোগে আগ্রহ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রায় প্রতিদিন শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় তিতাসের সরবরাহকৃত লাইন থেকে বাড়ি বাড়ি সংযোগগুলো স্থাপন করা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নামধারী কিছু আওয়ামীলীগ নেতাও চোড়াই গ্যাস সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের সাথে যোগসাজশ করে মাইলের পর মাইল রাস্তা কেটে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা ৪ ইঞ্চি, ২ ইঞ্চি অথবা ১ থেকে পৌনে ১ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে গ্যাসের মূল লাইন স্থাপন করছে। চোরাই গ্যাস সংযোগ সিন্ডিকেটের প্রলোভনে এ উৎসবে গা-ভাসিয়েছে পৌরসভা ও এর আশপাশের লক্ষাধিক লোক। এখন আর বৈধ উপায়ে গ্যাস সংযোগ নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না স্থানীয়রা।
কারণ, হাত বাড়ালেই মেলে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। এসব কারণে অগ্নিকান্ডের মতো দুর্ঘটনা ও জীবননাশের ঝুঁকিও বাড়ছে। বিশেষ করে রাতের আঁধারে সংযোগগুলো স্থাপন করায় সংযোগ কর্মীরা কোনো কোনো স্থানে পথচারীদের গতিরোধ করে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। অনুমোদিত প্রযুক্তি ব্যবহার না করে সংযোগগুলো দেওয়ায় বিভিন্ন পাকা সড়কের ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠিকাদার হিসেবে তারাই এসবের সাথে যুক্ত রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, শ্রীপুর পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত সড়কগুলো কেটে গ্যাস পাইপের লাইন সরবরাহ চলছে। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। একই সাথে সীমাহীন দুর্নীতির কারনে বৈধভাবে নতুন গ্যাস সংযোগ পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারন মানুষকে।
অভিযোগ উঠেছে অবৈধ গ্যাস চোর চক্রের সদস্যদের উৎসাহ জোগাচ্ছে শ্রীপুরের সীমান্তবর্তী গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নয়নপুর (রাজেন্দ্রপুর) এলাকার আব্দুল বারেকের পুত্র সঙ্ঘবদ্ধ গ্যাস চোর চক্রের প্রধান হোতা তিতাস গ্যাসের ঠিকাদার পরিচয়দানকারী নুরুল ইসলাম। শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকার কিছু ওয়েল্ডিং কারখানা ও ওয়ার্কশপের মালিক অননুমোদিত এসব সংযোগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়াও অপ্রচলিত, নাম সর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ধারী ব্যাক্তি, সাংবাদিকতা পেশাকে পুঁজি করে ও প্রভাব দেখিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কখনো কখনো জাতীয় দৈনিক ও পেশাদার সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে ওইসব সাংবাদিক পরিচয়ধারীরা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। প্রকৃত সাংবাদিকেরা এসব কাজে বাধার সৃষ্টি করলে ডিবির মাধ্যমে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়। কোনো কোনো জায়গায় দিনে দুপুরেই রাস্তার পাশে প্রকাশ্যে এসব চলছে। এসব কাজে জড়িতরা পুলিশের সাথে সম্পর্ক না রাখলে আবার মামলায়ও জড়িয়ে পড়ছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাকা-কাঁচা সড়ক, বাড়ি-ঘর, ভবনের ক্ষতিসাধন করে অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির সময় পুলিশকে তথ্য দেওয়া হলে পুলিশ ওই এলাকাতেই প্রবেশ করে না। পুলিশকে ম্যানেজ না করলেই শুধুমাত্র অবৈধ সংযোগের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করা হয়। শ্রীপুর পৌরসভার আসপাডা এলাকা, আনসার রোড, মাষ্টারবাড়ী ও লিচু বাগান এলাকা, প্রশিকার মোড় এমসি বাজার, মাস্টারবাড়ী, বহেরারচালা, এসকিউ গেইট, মুলাইদ, কেওয়া নতুনবাজার, ভাংনাহাটী, ছাপিলাপাড়া, বৈরাগীরচালা, গারোপাড়া, গিলাবেড়াইদ, শিশু পল¬ী-এমসি বাজার সড়কের আশপাশ এলাকা, নতুন বাজার এলাকার এএসএম ক্যামিকেল কারখানার দক্ষিন পাশের এলাকা,নয়নপুর হয়ে জৈনা বাজার, আবদার বাজার, শিমলাপাড়া সী-গাল মোড়, সলিং মোড়, কাওরান বাজার, আক্তাপাড়া, টেপিরবাড়ী এলাকার টেডনবাড়ী, খুশো মাদবরের বাড়ীর আশপাশের এলাকা, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সড়ক, কেওয়া বাজার, চন্নাপাড়া, রাজাবাড়ী, ধলাদিয়া, সাটিয়াবাড়ী, গজারিয়া, নোয়াগাঁও, প্রভৃতি এলাকায় অবৈধ সংযোগগুলো স্থাপন করা হচ্ছে। সংযোগ গ্রহণকারী পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংযোগ প্রদানকারী ঠিকাদারেরা তিতাসের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে সংযোগ প্রক্রিয়া চালিয়ে থাকে বলে প্রচার দিয়ে থাকে।
ভবিষ্যতে এ সংযোগের বৈধতা দেওয়া হবে বলেও মুখরোচক প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফুসলানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সংযোগগুলো সরকার বৈধ করতে বাধ্য হবে বলেও সাধারণদের আশ্বস্ত করা হয়।সংযোগ গ্রহণকারীরা জানান, ঠিকাদারেরা রাইজার প্রতি তাদের কাছ থেকে সর্বনিন্ম ৪০ হাজার ও সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা করে সংযোগমূল্য নিয়ে থাকে। মূল লাইনের সাথে দূরত্ব ভেদে এ মূল্যের উঠানামা হয়। শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার একাধিক গ্যাস সরঞ্জাম ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকেই গড়ে গত মে মাস পর্যন্ত কোটি টাকার গ্যাস সংযোগে ব্যবহার্য উপকরণ বিক্রি করেছেন।গাজীপুর তিতাস গ্যাস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ এম সাইফুল ইসলাম জানান, অবৈধ এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন কাজে তিতাস গ্যাস বিভাগকে সহযোগিতা করতে সংস্থাপন ও স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরাও সেই চিঠির কপি পেয়েছি। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার তিতাস গ্যাস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মশিউর রহমান জানান, অবৈধ এসব সংযোগের খবর আমরা পেয়েছি। গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে যেসব পাইপ, রাইজার, সুইচ অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি সেসব উপকরণ দিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগগুলো দেওয়া হয়ে থাকে। এ সংযোগগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো বৈধতা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না। খুব শীঘ্রই বিশেষ অভিযান চালিয়ে এগুলো উচ্ছেদ করে সংযোগ গ্রহণকারী ও সংযোগ প্রদানকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।