চুরির
অপবাদ দিয়ে সিলেটে ১৩ বছরের
এক শিশুকে খুঁটিতে বেঁধে
পৈশাচিক নির্যাতন করে হত্যার
ঘটনায় প্রধান আসামি মুহিত
আলমকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
করেছে আদালত।
মঙ্গলবার সিলেটের কুমারগাঁও
উপজেলার বাস স্টেশন এলাকার
সুন্দর আলি মার্কেটের সামনে
চোর সন্দেহে বর্বর নির্যাতনের
একপর্যায়ে মারা যায় ১৩ বছরের
শিশু রাজন। ঘটনার ৫ দিনের মাথায়
গতকাল রাজনকে নির্যাতনের
ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পায় ইউটিউব
ও ফেসবুকে। ভিডিওচিত্র ধারণসহ
পুরো ঘটনার ব্যাপারে
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার
মুহিতের ৭ দিনের রিমান্ডর
আবেদন করা হয়। পরে শুনানির জন্য
আজ দিন ধার্য করেন আদালত।
শুনানি শেষে বিচারক ফারহানা
ইয়াসমিন মুহিতের ৫ দিনের
রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে, এ মামলার আরেক আসামি
ইসমাঈল হোসেন আবলুকে (৩২)
গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিলেট
মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)
জালালাবাদ থানা এলাকার
লামাকাজি মিরেরগাঁও থেকে
সোমবার ভোরে ইসমাঈলকে
গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত
ইসমাইল শিশু রাজন হত্যার প্রধান
আসামি মুহিত আলমের তালতো
ভাই। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সাথে
একই পরিবারের তিন ভাই এবং
অনেকে জড়িত আছে। ভিডিওচিত্র
দেখে মুহিতের ভাই সৌদি
প্রবাসী কামরুলের সংশ্লিষ্টতা
নিশ্চিত হয়ে রোববার বিকেলে
পুলিশ তার দেশ ত্যাগে
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাজনকে
পৈশাচিক নির্যাতন করে লাশ
গুমের চেষ্টা করে ঘাতকরা। ওইদিন
ঘাতকরা বেলা ১১টার দিকে
একটি মাইক্রোবাসে তার লাশ
পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামের মাঠে
ফেলে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীর
সন্দেহ হলে মাইক্রোবাসসহ
একজনকে আটক করে। খবর পেয়ে
রাতে থানায় গিয়ে পরিবারের
সদস্যরা রাজনের লাশ শনাক্ত
করেন।
ঘটনাটির ভিডিও চিত্র
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তাতে
দেখা দেখা যায়- শিশুটি বাঁধা
অবস্থায় পানি চাইলে তাকে ঘাম
খেতে বলা হয়। ‘আমাকে আর
মারবেন না, মরে যাবো। হাড়-গুড়
ভেঙে গেছে। পুলিশের কাছে
দিয়ে দেন।‘ রাজনের এমন আকুতিও
তাদের দমাতে পারেনি।
২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র যারাই
দেখেছেন কেউ চোখের পানি
ধরে রাখতে পারেননি। রাজনের
শরীরের এমন কোন জায়গা নেই
যেখানে নির্যাতন করা হয়নি।
ভিডিওচিত্রে দেখা যায়,
নির্যাতন সইতে না পেরে রাজন
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে
স্তব্ধ হয়ে যায় তার শরীর। শ্বাস-
প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
রাজনের পুরো নাম সামিউল ইসলাম
রাজন। বয়স ১৩। বাড়ি সিলেট
শহরতলির কান্দিগাঁও ইউনিয়নের
বাদেআলী গ্রামে। পিতার নাম
আজিজুর রহমান। তিনি পেশায়
মাইক্রোচালক। আর মা লুবনা বেগম
গৃহিণী। সিলেট শহরতলির অনন্তপুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা
করেছে সে। অভাব-অনটনের
সংসারে আর পড়ালেখা করতে
পারেনি। পিতাকে সাহায্য
করতে সবজি ব্যবসায় নামে।
এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ: রাজন হত্যার পর
এলাকার সর্বত্র বিরাজ করছে
ক্ষোভ। বাদে আলী বাইয়ারপাড়া
গ্রামবাসী হত্যাকারীদের বিচার
দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের
করে। মিছিলটি তেমুখী পয়েন্ট
থেকে শুরু করে জালালাবাদ
থানার সামনে গিয়ে শেষ হয়।
পরে সেখানে এলাকাবাসী
বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বিক্ষুব্ধ
জনতা অবিলম্বে রাজনের খুনিদের
১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার এবং
ফাঁসির দাবি জানান। পরে
নিহতের পিতা বাদে আলী
বাইয়ারপাড়া গ্রামের শেখ মো.
আজিজুর রহমান ৩ জনের নাম উল্লেখ
করে আরও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত করে
জালালাবাদ থানায় একটি
লিখিত অভিযোগ করেন।