বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দল পুনর্গঠন করে বিএনপি আবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামবে। গত শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি একথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি’র আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ, বিএনপি জ্বালাও-পোড়াওয়ে বিশ্বাস করে না।
ঈদ শেষে খালেদা জিয়ার এ ঘোষণার রেশ কাটতে না কাটতেই, তার দলের নেতা কর্মীদের নতুন করে গ্রেপ্তার – হয়রানির খবর আসতে শুরু করেছে।
রোববার রাতে ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পটুয়াখালী পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.ফয়েজ আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, রাজীবের বিরুদ্ধে ঢাকায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং ফেরীঘাটে তাদের গাড়ি তল্লাশি করে ৪৫টি ইয়াবা নেশার ট্যাবলেট পাওয়া গেছে।
প্রায় একই সময় রোববার রাত ১১টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের রাজধানীর রামপুরার বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে এ সময় আকরামুল বাসায় ছিলেন না।
এর আগে রোববার দুপুরে নরসিংদীর শিবপুরে আকরামের গ্রামের বাড়িতেও পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে।
ওদিকে, রোববার বিকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাগুরা জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মিজানুর রহমানকে। পুলিশ জানিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ চলাকালে গত ২১ মার্চ সন্ধ্যায় মাগুরা-যশোর সড়কে একটি ট্রাকে পেট্রোল বোমা হামলায় ৫ শ্রমিক নিহত ও ৪ শ্রমিক গুরুতর দগ্ধ হন। মিজান ওই মামলায় অন্যতম আসামি। এছাড়াও মিজানের বিরুদ্ধে মাগুরার ভায়না মোড়ে ট্রাক পোড়ানোসহ নাশকাতার একাধিক মামলা রয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর সরকারের আক্রোশের নিন্দা জানিয়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানির কারণে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর পরিবারে এবার ঈদের আনন্দ ছিল না।।
রোববার চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগে নিজ বাসভবনে আয়োজিত ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আমীর খসরু বলেছেন,“হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের জেলে রাখা হয়েছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অনেকে গুম-হত্যার শিকার। শত শত নেতকর্মী পঙ্গু। এসব পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের ঈদ কেটেছে কারাগারে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এরকম পরিস্থিতি কখনও ছিল না।”
এ দিকে, সরকার বিএনপি নেত্রীকেও চাপের মুখে রাখতে চাচ্ছে। ঈদের ছুটি শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলার শুনানির তারিখ ধার্য করেছে আদালত।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানির নির্ধারিত দিন ২৩ জুলাই।
উচ্চ আদালতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া দুর্নীতির মামলা বাতিল করতে জারি করা রুলের শুনানি চলছে। এ ছাড়া গত ১৯ জুন নাইকো মামলার রুল বাতিল করে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন আদালত।
তাছাড়া, ডান্ডি ডায়িং নামক শিল্প প্রতাতিষ্ঠানের ঋণের দায়ে ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে মা কেগম খালেদা জিয়া, আরাফাতের বিধবা স্ত্রী ও দুটি নাবালিকা সন্তানের নামও নতুন করে মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল- নোমান বলেছেন, মিথ্যা মামলা আর দমন-পীড়ন চালিয়ে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হয় না। বিরোধী নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন যত বাড়বে সংকট তত ঘনীভূত হবে।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়িতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত‘ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়’ অনুষ্ঠানে নোমান বলেন, একমাত্র মধ্যবর্তী নির্বাচনই চলমান সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারে।