৫২ অর্থনীতি ডেস্ক ।।
আদালতের লিখিত অনুমতি বা নির্দেশনা ছাড়া এখন থেকে সরাসরি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) গ্রাহকের হিসাব-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেবে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
দুদকের চাহিদার ভিত্তিতে গ্রাহকের হিসাব-সংক্রান্ত তথ্য না দিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল রোববার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ২৩ জুন দুদকের জারি করা এক অফিস আদেশ সংযুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা দিয়েছে। এর আগে ব্যাংকগুলোকেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আইন অনুযায়ী, দুদক ও পুলিশ আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব-সংক্রান্ত তথ্য চাইতে পারে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও এ ধরনের তথ্য দেওয়ার আইনগত বিধান নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে দুদক সুষ্ঠু অনুসন্ধান এবং মামলা তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্র মালিকানাধীন ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকার্স বুকস্ এভিডেন্স অ্যাক্ট (বিবিইএ), ১৮৯১-এর ৫ ও ৬(১) ধারা এবং কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (সিআরপিসি), ১৮৯৮-এর ৯৪(১) ধারা অনুযায়ী আদালতের সুনির্দিষ্ট আদেশ ছাড়া আমানতকারী/ হিসাবধারীর হিসাব সংক্রান্ত তথ্য কোনো পক্ষকে প্রদানের সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসরকারি একাধিক ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দুদক ও পুলিশের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের হিসাব-সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক দুদকের চিঠির ভিত্তিতে এ তথ্য সরবরাহ করে। তবে বেশ কয়েকটি ব্যাংক এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত জানতে চায়।
এর জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান উল্লেখ করে গ্রাহকের তথ্য না দিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেয়। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, অনেক সময় গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব তথ্য চেয়ে সেটির অপব্যবহারও করা হয়ে থাকতে পারে। এ কারণেই দুদক এ-সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেছিল। সেটির ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই নির্দেশ দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার ফলে দুদকের তদন্তকাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে কি না জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। যদি একান্তই কোনো ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের তথ্য লাগে সে ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিয়েই কাজটি করা যাবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইন অনুযায়ী মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং আদালত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকের তথ্য চাইতে পারে। সে অনুযায়ী গ্রাহকের হিসাব-সংক্রান্ত তথ্য দিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সংস্থা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকের হিসাব-সংক্রান্ত তথ্য নিত। নানা কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এ ধরনের তথ্য দিতে বাধ্য হয়। এরপরও এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ চাওয়া হয়। তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতের লিখিত অনুমতি ছাড়া দুদক ও পুলিশকে গ্রাহকের তথ্য না দিতে নির্দেশ দেয়।
নুরুল আমিন আরও বলেন, এর ফলে গ্রাহকের তথ্যের গোপনীয়তা যেমন নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি গ্রাহকের হিসাব-সংক্রান্ত কোনো তথ্য চাইতে হলে তার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।