সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ড. মুসা বিন শমসেরের সুনাম ক্ষুণ্নের অভিযোগে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই আর ড. মুসা বিন শমসের আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমেই বেয়াই।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ফরিদপুর জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট স্বপন পাল রোববার রাত ১১টার দিকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ফরিদপুর সদর থানায় প্রবীর সিকদারকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ওই মামলা দায়েরের আগে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে অবস্থিত ‘উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ’ কার্যালয় থেকে প্রবীর সিকদারকে তুলে নিয়ে যায় শেরে বাংলা নগর ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর গভীর রাতে তাকে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিতা ও ছেলে সুপ্রীয় জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ ও ডিবির একটি দল রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে তার বাবাকে তুলে নিয়ে গেছে। তার বাবাকে নিয়ে যাওয়ার সময় শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আবদুল জলিল থানায় নেয়ার কথা বললেও নেয়া হয়েছে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে ডিবি কার্যালয়ের ভেতর থেকে প্রবীর সিকদারকে বের করে পুলিশ। গাড়িটির ভেতর থেকে প্রবীর বাইরে অপেক্ষমাণ স্ত্রী-পুত্রসহ স্বজনদের জানান, তার বিরুদ্ধে ফরিদপুরে আইসিটি আইনে একটি মামলা হয়েছে। ডিবি তাকে সেখানেই নিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, প্রবীর সম্প্রতি ফেসবুকে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তার ‘কিছু হলে’ কয়েকজন ব্যক্তি দায়ী থাকবেন বলেও তিনি পোস্টে উল্লেখ করেন। এসব বিষয়ে শোনার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়েছে।
গত ১১ আগস্ট বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ‘আমার জীবন শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ এই শিরোনামে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট করেন প্রবীর সিকদার। তাতে লেখা হয়, ‘আমি আমার জীবনের শঙ্কার কথা পুলিশকে জানিয়েছি। কোনো লাভ হয়নি। তখনো ফেসবুকের মাধ্যমে আমার জীবন শঙ্কার কথা জনতার আদালতে পেশ করেছিলাম। আর কোনো অভিযোগ করবার সময় ও সুযোগ আমি নাও পেতে পারি। আমি আজ ফেসবুকের মাধ্যমে জনতার আদালতে জানিয়ে রাখছি আবার সেই জীবন শঙ্কার কথা। আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শঙ্কা, তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন- ১. এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিনজনের অনুসারী-সহযোগীরা। ফেসবুকের মাধ্যমে আমি সকল দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইছি।’
প্রবীর সিকদারের ছেলে সুপ্রিয় জানান, ২০০১ সালে তার বাবা জনকণ্ঠ পত্রিকায় মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। এরপর বাবার ওপর হামলা করা হয়। কয়েক দিন আগে ওই কলামটি নিজের অনলাইন ও দৈনিকে প্রকাশ করেছেন। কলামটিতে প্রচুর শেয়ার হয়েছে। এরপরই তাকে বেনামে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়।
২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকাকালে সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্মক আহত হন প্রবীর সিকদার। এ ঘটনায় তার একটি পা কেটে ফেলা হয়। এরপর দেশে-বিদেশে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে তিনি দৈনিক সমকালে যোগ দেন। কালের কণ্ঠেও কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।
রেডিও তেহরান