৫২ জাতীয় ডেস্ক ।।
এক হাতে ক্রাচ, অন্য হাতে হাতকড়া। দুই পাশে দুই পুলিশ। কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে আদালতে যাচ্ছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। প্রশ্ন উঠেছে, শারীরিকভাবে পঙ্গু এবং দুর্বল একজন মানুষকে এভাবে হাতকড়া পরানো যায় কি না।
আইনজ্ঞরা বলছেন, পুলিশ এ ক্ষেত্রে আইন ও বিধি লঙ্ঘন করেছে। এ রকম দুর্বল মানুষকে কোনোভাবেই হাতকড়া পরানো যায় না। পুলিশ প্রবিধানে হাতকড়া পরানোর যে শর্ত, ধারা বা প্রেক্ষাপট উল্লেখ আছে, তার সঙ্গে প্রবীর সিকদারকে হাতকড়া পরানোর যুক্তি মেলে না।
বেআইনিভাবে হাতকড়া পরানোর অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার জামিল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ নিয়ে আমি কিছু বলব না।’
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের পর গতকাল এবং আগের দিন সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে ফরিদপুরের আদালতে হাজির করে পুলিশ।
হাতকড়ার ব্যবহার নিয়ে আইন আছে পুলিশ প্রবিধান বা পিআরবিতে। ওই বিধির ৩৩০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘…বিচারাধীন বন্দীকে তাহাদের পলায়ন বন্ধ করিবার জন্য যাহা প্রয়োজন তাহার চাইতে বেশি কড়াকড়ি করা উচিত নহে। হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় এবং অমর্যাদাকর। বয়স বা দুর্বলতার কারণে যাহাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ ও নিরাপদ তাহাদের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করা উচিত হইবে না।’
প্রবীর সিকদার ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় পঙ্গু হন। এরপর থেকে তিনি কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাফেরা করছেন। তাই ওই সাংবাদিকের পালিয়ে যাওয়ার ন্যূনতম ঝুঁকি ছিল না। বয়সের বিষয়টি বাদ দিলেও প্রবীর শারীরিকভাবে দুর্বল। তাঁর নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ ও নিরাপদ। প্রবীরের পক্ষে পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগও নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, পুলিশ বিধান মানা পুলিশের জন্য বাধ্যতামূলক। না মানাটা অপরাধ। কেউ না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
পুলিশ প্রবিধানে আরও বলা আছে, বন্দীর পলায়ন ঠেকাতে অনেক সময় হাতকড়ার ব্যবহার প্রয়োজন না-ও হতে পারে। কিন্তু আক্রমণাত্মক অপরাধ সংঘটনের সম্ভাবনা থাকলে বা বন্দী কুখ্যাত বলে পূর্বপরিচিত হলে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রবীর সিকদার একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও সাংবাদিক। যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আইনসংগতভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যে মামলা হয়েছে, তাতে প্রক্রিয়াগতভাবেই ত্রুটি রয়েছে। তা ছাড়া, প্রবীর সিকদার ভয়াবহ কোনো অপরাধী নন, রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তিও নন। তাহলে তাঁকে কেন হাতকড়া পরাতে হবে?
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রায় সব বক্তাই প্রবীর সিকদারকে হাতকড়া পরানোর কড়া সমালোচনা করেন। তাঁদের অভিযোগ, সাংবাদিক সমাজকে হেয় করতে প্রবীর সিকদারকে হাতকড়া পরানো হয়েছে।
সূত্র- প্রথম আলো ।