৫২ জাতীয় ডেস্ক ।।
শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যকে ‘অনভিপ্রেত ও অসংলগ্ন’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলেছে, ‘অর্থমন্ত্রী অতীতে অন্যদের ক্ষেত্রেও বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এ সবের মাধ্যমে তিনি জাতির কাছে নিজেকে হাস্যকর করে তুলেছেন। হলমার্ক কিংবা বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি তার কাছে কোনো ঘটনাই নয়।’
মঙ্গলবার রাতে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি বলা হয়, ‘সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি হয়ে থাকে, যে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের অনুমোদন রয়েছে। উচ্চশিক্ষার উৎকর্ষ সাধন ও প্রকৃত মানবসম্পদ সৃষ্টি এবং শিক্ষকদের মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকরা যে কোনো গঠনমূলক প্রস্তাব মেনে নেবেন। কিন্তু গণমাধ্যমে মন্ত্রীর কথায় মনে হয়েছে তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন- আমলাদের প্রতিনিধি। সুতরাং তার কাছ থেকে শিক্ষকরা সুবিচার পাবেন বলে আমরা মনে করি না।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক ও শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে তার জ্ঞানের অভাবের কারণেই তিনি এরূপ দায়িত্বহীন মন্তব্য করেছেন। শিক্ষকদের পদোন্নতিকে ঘিরে তিনি যখন দুর্নীতির কথা বলেন, অন্যদিকে হলমার্ক কেলেঙ্কারিকে তিনি কিছুই মনে করেন না এবং বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি অত্যন্ত হালকাভাবে দেখেন, তার মুখে অন্তত জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষকদের বিষয়ে এরূপ অবাঞ্ছিত বক্তব্য নিতান্তই অশোভন।’
বিবৃতিতে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানানো হয় অন্যথায় শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি পূরণে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দেয়া হয়।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে চরম ‘অবমাননাকর, অনভিপ্রেত ও অসংলগ্ন’ দাবি করে এর প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আজ বুধবার ও কাল বৃহস্পতিবার দুইদিনের সর্বাত্মক কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
মঙ্গলবার রাতে সমিতির সদস্যদের জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম এমনকি পরীক্ষা গ্রহণ থেকেও নিজেদের বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষকদের এই সংগঠনটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘কটূক্তি’ আখ্যায়িত করে এর জন্য তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে সংগঠনটি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খবির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাফরুহি সাত্তার বলেছেন, শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন নিয়ে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যা বলেছেন- তা অনভিপ্রেত ও সংলগ্নহীন। তাঁরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছেন। অর্থমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিজেকে ‘আমলাদের প্রতিনিধি’ হিসেবে প্রমাণ করেছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বতন্ত্র পে-স্কেল এবং নতুন বেতন কাঠামোয় সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে যখন আন্দোলন চালিয়ে আসছে, তখন অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা সরকারের জন্য হটকারিতার শামিল বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষকরা।
নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কর্মসূচির মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছে। এই কর্মবিরতির কোনো জাস্টিফিকেশন নেই। তারা জানেই না পে-স্কেলে তাদের জন্য কী আছে, কী নেই।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার জানা নেই, কোথায় তাঁদের মর্যাদার হানি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের করাপ্ট প্র্যাকটিস নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। প্রত্যেকেই এখানে সহজেই অধ্যাপক হয়ে যান। সহযোগী অধ্যাপকদের তাঁরা খেয়াল খুশিমতো পদোন্নতি দেন। দেখা গেছে, নিচে ১০ জন প্রভাষক; কিন্তু ওপরে এক হাজার অধ্যাপক। এটা কিছু হলো? শুধু ওপরে পদোন্নতি হবে, এটা ঠিক না।’
বিষয়টি মন্ত্রিসভা কমিটিকে জানানো হবে—এমনটা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, ‘আমলাতন্ত্রকে আমরা যেভাবে ম্যানেজ (পরিচালনা) করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফদেরও সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করব।’
অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবমূল্যায়নের প্রতিবাদ ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণার দাবিতে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে। মঙ্গলবার শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক কাজ হয়নি। আন্দোলনের মধ্যই অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে ফুঁসে ওঠেছেন শিক্ষকরা।