৫২ জাতীয় ডেস্ক ।।
বর্ষা মৌসুমে মশার বংশ বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট মাসে রাজধানীতে ৭২৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া, চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে আরো ৫৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রফেসর মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, চলতি বছর সারা দেশে ১,৪০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ধরা পড়েছে রাজধানীতে। গত দেড় মাসে ঢাকাতে অন্তত: চারজন এ ডেঙ্গু জ্বরে প্রাণ হারিয়েছেন।
চিকিৎসাবিদদের মতে, ডেঙ্গু জীবাণুবাহী মশা কামড়ানোর পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে সাধারণত রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। কিছু কিছু ডেঙ্গু রোগী কোনো উপসর্গ ছাড়াই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।
দুই ধরণের ডেঙ্গু রোগ লক্ষ্য করা যায়- সাধারণ ডেঙ্গু ও রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে রোগীর প্রচণ্ড শরীরব্যথা, মাথাব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চোখব্যথা, চোখ থেকে পানি পড়া, অরুচি বা বমি-বমিভাব ইত্যাদি উপসর্গ থাকে।
সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের জ্বর চার-পাঁচ দিনের মধ্যে কমে গিয়ে গায়ে হামের মত রাশ হতে পারে। তারপর এ জ্বর সেরে যায়। কিন্তু হেমোরেজিক ডেঙ্গু সাধারণ ডেঙ্গুর তুলনায় বেশি মারাত্মক এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসার অভাবে তা রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জ্বরের সাথে সাথে রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ষক্ষরণ হয়। রোগীর জ্বরের সাথে দাঁত ও মাড়ির গোড়া থেকে রক্ত পড়া, নাক দিয়ে বমির সাথে রক্ত পড়া, গায়ে রক্ত জমে ছিটা ছিটা দাগ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এছাড়া, পায়ুপথ দিয়ে রক্তপাত শুরু হতে পারে। আরো মারাত্মক আকার ধারণ করলে এ রোগ থেকে সার্কুলেটরি ফেইলিওর হয়ে আরো নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
বেশির ভাগ ডেঙ্গু জ্বরই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায় এবং অধিকাংশই ভয়াবহ নয়। প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান, বিশ্রাম ও যথেষ্ট পরিমাণ তরল খাবার। সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য এসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল) গ্রুপের ওষুধ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুন-জুলাই থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। এ সময় জ্বর, পেটের ব্যথা ও অপারেশন দরকার এমন রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, এডিস মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলে ডেঙ্গু হবে না। চিকিৎসার জন্য প্রথম থেকেই পরিমিত পানি (২৪ ঘণ্টায় ২-৩ লিটার) এবং প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনো ওষুধ লাগে না। জ্বর কমানোর জন্য বারবার গা মোছাতে হবে ভেজা কাপড় দিয়ে। জ্বরের সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বিশেষ চিকিৎসার জন্য।
চিকিৎসকরা আরো বলছেন, হেমোরেজিক ডেঙ্গু হলো দুই ধরণের ডেঙ্গুর সবচেয়ে খারাপ ধরণটি। সাধারণত একই রোগীর দ্বিতীয় বার ডেঙ্গু জ্বর হলে এমনটি হয় বলে ধরে নেয়া হয়। রোগটি শুরু হয় অল্প মাত্রার জ্বর দিয়ে এবং শিশুরাই এতে বেশি আক্রান্ত হয়।