৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে, মুদ্রা পাচারের মামলায় ছয় বছর কারাদণ্ডের সাজা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা আরাফাত রহমান কোকো হৃদরোগে মারা গেছেন।
শনিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয় বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে উনার (আরাফাত) মৃত্যু হয়।”
আরাফাতের বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। সাত বছর আগে দেশ ছাড়ার পর স্ত্রী সৈয়দ শামিলা রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে কুয়ালালামপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে তিনি থাকছিলেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
মামলা নিয়ে দুই ছেলে প্রবাসে থাকার মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বর্তমানে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে রয়েছেন খালেদা জিয়া। সেখানেই ছেলের মৃত্যুর খবর আসে।
মৃত্যুর খবর আসার পর গুলশান কাঁচাবাজার সংলগ্ন মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ওই কার্যালয়ে ঢুকতে দেখা যায়। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, কুরআনখানির জন্য তাদের আনা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার কয়েকজন নিকট আত্মীয়কে কার্যালয়ে ঢুকতে দেখা গেছে। এছাড়া বিএনপি এবং ২০ দলের নেতা-কর্মীদের ভিড় জমেছে সেখানে।
মারুফ কামাল বলেন, আরাফাতের দাফনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে তা জানানো হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার সাংবাদিকদের বলেছেন, রোববার জোহরের নামাজের পর কুয়ালালামপুরের মসজিদে নাগারায় আরাফাতের জানাজা হবে।
জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার আরাফাত ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন।
তারপর তিনি ব্যাংকক থেকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান বলে ২০১১ সালে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় জানিয়েছিলেন ঢাকায় থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত।
ওই বছরের ২৩ জুন মুদ্রা পাচারের মামলার রায়ে আরাফাতকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত; সেই সঙ্গে ১৯ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর কোকোর সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর আদালতের ডাকে না ফিরলে তাকে পলাতক দেখিয়েই বিচার এবং সাজার রায় হয়; পলাতক থাকায় আপিলের সুযোগ পাননি তিনি। তবে বিএনপির দাবি, এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২০০৯ সালের ১৭ মার্চ মহাজোট সরকার আমলে আরাফাত কোকোর বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলার সোয়া দুই বছরের মধ্যে রায় হয়।
এর আগে জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আরাফাত।
ওই সময় খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনিও সেনা নিয়ন্ত্রিত ওই সরকারের সময় মুক্তি পেয়ে বিদেশ যান। সপরিবারে এখন লন্ডন রয়েছেন তারেক।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হলেও কোকো সেই পথ ধরেননি।
তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর আকস্মিকভাবে আরাফাতকে করা হয় জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।
অভিযোগ রয়েছে, বিসিবির নির্বাচিত কমিটিকে হটিয়ে আইনের মারপ্যাঁচে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে বিসিবিকে তখন ‘দখল’ করেছিল কোকো ও তার সঙ্গীরা।
সাবের হোসেন চৌধুরীকে বিসিবি সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে তখন বিসিবির ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের পদ নিয়েছিলেন আরাফাত কোকো।