৫২ জাতীয় ডেস্ক ।।
আজ মঙ্গলবার ২৩৪ পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ তফসিল ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।
তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সময় পাবে মাত্র পাঁচদিন।
নির্বাচন পরিচালনা ও আচরণ বিধিমালার ভেটিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আইন মন্ত্রণালয়ে বিলম্ব হওয়ায় তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি থাকলেও সোমবার তা ঘোষণা করতে পারেনি ইসি। সন্ধ্যার পর ভেটিং সম্পন্ন হলে রাতেই গেজেটের জন্য বিধিমালা দুটি বিজি প্রেস পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, তফসিল ঘোষণার পর পাঁচদিনের মধ্যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্য নির্বাহকের নাম, পদবী ও নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেবে। তার অনুলিপি দিতে হবে নির্বাচন কমিশনে। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার গতকালই পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন।
এজন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে দুপুরে নির্বাচন পরিচালনা ও আচরণ বিধিমালার ভেটিং দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আইনমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন। নির্বাচন কমিশনারদের বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত অফিসে অবস্থানেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইসির একজন যুগ্ম সচিব বিকালে জাতীয় সংসদে গিয়ে আইনমন্ত্রীর স্বাক্ষর প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই দুটি বিধিমালার ভেটিং সম্পন্ন না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত গতকাল তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য সন্ধ্যার পর দুটি বিধিমালার ভেটিং সম্পন্ন হলে তা রাতেই গেজেটের জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইসির পাঠানো দুটি বিধিমালায় বেশকিছু সংযোজন-বিয়োজন করতে গিয়ে ভেটিং প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হয়। এছাড়াও মন্ত্রিসভায় বৈঠক থাকার কারণে যথাসময়ে মন্ত্রীর স্বাক্ষর প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হয়নি।
আইন অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। এই হিসেবে মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভার নির্বাচন আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কমিশন ২ জানুয়ারি হালনাগাদ করা ভোটার তালিকার খসড়া এবং ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। সে জন্য আইনগত জটিলতা এড়াতে তারা জানুয়ারিতে নির্বাচন না করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে চায়। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করতে চায় ইসি। যদিও থার্টি ফাস্ট নাইটের কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন করা হলে ভালো হবে বলে মতামত এসেছে।
মনোনয়নপত্র ও ব্যালট মুদ্রণ শাখার একজন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, মনোনয়নপত্র ও কাউন্সিলর পদের ব্যালট মুদ্রণে তারা কমিশনের অনুমতি পেয়েছেন। সোমবারই তারা এগুলো ছাপানোর জন্য বিজি প্রেসে পাঠিয়েছেন। তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত হওয়া মাত্রই তা ছাপানো শুরু হবে।
১২ অক্টোবর দলভিত্তিক পৌরসভা ভোট করতে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে প্রথমে একটি অধ্যাদেশ জারী করা হয়। ১৯ নভেম্বর সংসদে পাস হয় পৌর আইন (সংশোধন)।
৭৪ প্রতীকে পৌর নির্বাচন
এবারের পৌরসভার মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর এই তিন পদের জন্য ৭৪টি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ইসির নিবন্ধনে থাকা ৪০টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য তিন পদে ৩৪টি প্রতীক রাখা হয়েছে। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য ১২টি প্রতীক হলো- ইস্ত্রি, কম্পিউটার, ক্যারাম বোর্ড, চামচ, জগ, টাই, নারিকেল গাছ, বড়শি, মোবাইল ফোন, রেল ইঞ্জিন, হ্যাঙ্গার ও হেলমেট। স্বতন্ত্র সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ১০টি প্রতীক হলো— আঙ্গুর, কাঁচি, গ্যাসের চুলা, চকলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটি ব্যাগ, মৌমাছি ও হারমোনিয়াম। স্বতন্ত্র সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ১২টি প্রতীক হলো— উটপাখি, গাজর, টিউব লাইট, টেবিল ল্যাম্প, ডালিম, ঢেঁড়শ, পাঞ্জাবি, পানির বোতল, ফাইল কেবিনেট, ব্রিজ, ব্ল্যাক বোর্ড ও স্ক্রু ড্রাইভার।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ৩২৪টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে ২৪৫টি পৌরসভা নির্বাচন উপযোগী হয়। কিন্তু সীমানা ও আইন জটিলতার কারণে বর্তমানে ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করা যাবে। এই নির্বাচনের জন্য একশ’ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। ২০১১ সালের এ নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল ৩৬ কোটি টাকা।
সূত্র- ইত্তেফাক ।
এ জাতীয় আরো খবর...