ভোলা প্রতিনিধি
আসন্ন ৩০ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনের দিনক্ষন যতই ঘনিয়ে আসছে, ভোলা জেলার ভোলা সদর,বোরহান উদ্দিন ও দৌলতখান পৌরসভায় ভোটারদের মাঝে আতংক,সংশয় যেন ততই বাড়ছে। নির্বাচনকে ঘিরে এ তিনটি পৌরসভায় বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছে। বিএনপি সমর্থিত মেয়র,কাউন্সিলর প্রার্থীদের হুমকী দেয়া,তাদের প্রচার কর্মী ও ভোটারদের হুমকী-ধমকী,বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা-ভাংচুর করে আতংক সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে।এমন পরিস্থিতিতে ভোলার এই ৩টি পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হবে কিনা? পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কি পারবেন না সেই প্রশ্ন এখন সাধারন ভোটার ও প্রার্থীদের অনেকের মুখে মুখে। তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন,রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশের সমন্বয়ে মতবিনিময় সভায় এমনটি আভাস দিলেও সেটি কতটুকু কার্যকর হয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন ৩টি পৌরসভার ভোটাররা।
আসন্ন ৩০ডিসেম্বর ভোলা পৌরসভা নির্বাচনে ৩১হাজার ৩শত ৬০জন ভোটার ভোট প্রদান করবেন। ১৮টি ভোট কেন্দ্রে ১শত ৮টি ভোট কক্ষের মাধ্যমে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
সরেজমিনে ভোলা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে জানা গেছে,ভোলা পৌরসভায় ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভোলা জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক হারুন অর রশিদ ট্রুমেন,নৌকা প্রতিক নিয়ে লড়ছেন বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভাগিনা ও জেলা যুবলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান ও হাতপাখা প্রতিক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী রয়েছেন আতাউর রহমান।
বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভাগিনা হওয়ায় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মনিরুজ্জামান পুলিশের সহায়তা নিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নানাভাবে হয়রানী করছে বলে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী হারুন অর রশিদ ট্রুমেন জানান।
এছাড়া মেয়র প্রার্থী মনিরুজ্জামানের ভগ্নিপতি শুভ’র নেতৃত্বে সুমন,সোহেল,শামীম সহ ২৫/৩০জনের আ’লীগ ক্যাডার পৌরসভার ৮নং ও ৯নং ওয়ার্ডে এবং ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ১৫/২০জন আ’লীগ ক্যাডার পৌরসভা ২নং ওয়ার্ডে পাহারা বসিয়েছে। এসব ক্যাডাররা বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকী দেয়।
ধানের শীষ প্রতিকের মেয়র প্রার্থী হারুন অর রশিদ ট্রুমেন আরো জানান,ইতোমধ্যে পুলিশ ভোলা জেলা বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিনকে আটক করে অবশেষে ছেড়ে দেয়। রাতে রাতে পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। তফসিল ঘোষনার পর থেকে মেয়র প্রার্থী মনিরুজ্জামানের ভগ্নিপতি শুভ’র নেতৃত্বে আ’লীগ ক্যাডাররা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ত্রাস সৃষ্টি করে ও বিএনপি’র বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ২০নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। এসব ক্যাডাররা প্রতিনিয়ত ধানের শীষ প্রতিকের পোষ্টার লাগাতে বিএনপি কর্মীদের বাঁধা দেয়,পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলে ও প্রচার কর্মীদের মারধর করে।
এব্যাপারে হারুন অর রশিদ ট্রুমেন পুলিশকে জানালেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয় না বলে জানান।
ভোলার বোরহান উদ্দিন পৌরসভা নির্বাচনেও ভোট গ্রহন হচ্ছে ৩০ডিসেম্বর। এ পৌরসভায় ৮হাজার ৪শত ১০জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ পৌরসভায় ৯টি ভোট কেন্দ্রে ৩২টি কক্ষে ভোটাররা ভোট প্রয়োগ করবেন। এ পৌরসভায় বিএনপি থেকে মনিরুজ্জামান কবির মিয়া ধানের শীষ প্রতিক ও বর্তমান মেয়র রফিকুল ইসলাম নৌকা প্রতিক নিয়ে লড়ছেন। নৌকা প্রতিকের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা হওয়ায় পুলিশ আ’লীগ নেতা-কর্মীদের সহায়তা করছে।
নৌকা প্রতিক নিয়ে পুলিশের সহায়তা নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। আর ধানের শীষ প্রতিকের মেয়র প্রার্থী মনিরুজ্জামান কবির মিয়া নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি ধানের শীষ প্রতিকে ভোটারদের ভোট দেয়ার জন্য আহবান জানান। মনিরুজ্জামান কবির মিয়া এ প্রতিনিধিকে জানান,এ পৌরসভায় নৌকা প্রতিকের মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা হওয়ায় ভোটারদেরকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের হুমকী দিয়ে ভোটারদের মাঝে আতংক সৃষ্টি করছে। গত ক’দিন পূর্বে মনিরুজ্জামান কবির মিয়ার বাসভবনে রাত সাড়ে ১২টায় আ’লীগ কর্মীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে।
হামলায় মনিরুজ্জামান কবির মিয়ার স্ত্রী সহ তার ৪কর্মী আহত হয়। হামলা,মারধর হুমকী-ধমকী উপেক্ষা করে তারপরও মনিরুজ্জামান কবির মিয়া প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভোলার দৌলতখান পৌরসভায় ও ৩০ডিসেম্বর ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এ পৌরসভায় ১০হাজার ৬শত ৬৫জন ভোটার ভোট প্রদান করবেন। ৯টি ভোট কেন্দ্রে ৩৫টি ভোট কক্ষের মাধ্যমে ভোট গ্রহন করা হবে। এ পৌরসভায়ও সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে শংকা দেখা দিয়েছে। এ পৌরসভায় নৌকা প্রতিক নিয়ে বর্তমান মেয়র জাকির হোসেন তালুকদার ও ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে আনোয়ার হোসেন কাকন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন দৌলতখান পৌর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর হোসেনও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন বাবু। কেন্দ্রীয় নির্দেশে অবশেষে তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এ পৌরসভায় ধানের শীষ ও নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই পুলিশি হয়রানী বাড়ছে বলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। জাকির হোসেন তালুকদারের নির্দেশে পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নানা ভাবে হয়রানী করছে বলে আনোয়ার হোসেন কাকন চৌধূরী অভিযোগ করেন। হামলা,মামলা ও পুলিশি হয়রানীর পরও এ তিনটি পৌরসভার ভোটাররা ৩০ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হবে বলে আশা করছেন।
এদিকে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান,পুলিশ কাউকে অন্যায় ভাবে হয়রানী করছে না। বিএনপি প্রার্থীদের নিকট থেকে কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নেয়া হবে।