এম,এ কাশেম ।।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের যুগীতলা এলাকায় রোববার দিবাগত গভীর রাতে নিহত দুই যুবকের পরিচয় মেলেনি। পরিচয় পাওয়ার ব্যাপারে পুলিশ সুত্র সম্ভাব্য যে নাম পরিচয় দিয়েছে এবং লোকমুখে প্রচার হয়েছে তা সঠিক নয়। স্থানীয় সাংবাদিকেরা তাদের একজনের (কথিত জঙ্গির) সাথে কথা বলেছেন।
দুপুর ২টার দিকে গাজীপুর মহানগরের পূর্ব এনায়েতপুর গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে মাহবুব(২৮) কে তার বাড়িতেই পাওয়া যায়। সে জানায়, ২৭ ডিসেম্বর রোববার তার সাথে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার কামারকান্দি গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মিনহাজও কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পায়। তারা ১০ বছর ৪ মাস সাজা ভোগ করে।
মাহবুব জানায়, তাকে অন্যায়ভাবে পুলিশ ২০০৫ সালে জঙ্গি ও নাশতকার মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে। সে নাশকতা এবং জঙ্গিবাদ ব্যাক্তিগতভাবে ঘৃণা করে আসছে এবং এখনও করে। তাকে গ্রেপ্তার করার সময় সে স্থানীয় হাতীমারা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।
সে জানায়, কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তির পর র্যাব সদর দপ্তরের সদস্যরা তাদেরকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে ভবিষ্যতে জঙ্গি তৎপরতার সাথে সাথে সম্পৃক্ত না হওয়ার আহবান জানায়। এ জন্য প্রতি মাসে একবার করে র্যাব কার্যালয়ে তাকে হাজিরা দিতে বলা হয়। পলাতক থাকলে জঙ্গিবাদের সাথে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে র্যাব নিশ্চিত হবে বলে জানায়। পরে সেখান থেকে রাতেই তাকে তার চাচা জালাল উদ্দিন ও শামসুল হকের কাছে তুলে দেয়।
মাহবুবের বাবা আলাল উদ্দিন জানায়, তিনি তার ছেলেকে সাজাভোগ শেষে ফিরে পেয়েছেন। গত ১০ বছরে ছেলের অনুপস্থিতিতে তার মা হাবিয়া বেগম এখন অপ্রকৃতিস্থ।
গাজীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুস ছালাম বিকেল ৫টার দিকে জানান, মৃতদেহের ময়না তদন্ত চলছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপ-পরিচালক মেজর মাকসুদ আলম বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে গাজীপুরের বাইপাস চৌরাস্তা থেকে ভোগড়া মোড় সংলগ্ন যুগীতলা গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়ীতে অভিযান চালায় পুলিশ। জঙ্গি সদস্যদের আস্তানা রয়েছে এমন খবরের ভিত্তিতে র্যাব সেখানে অভিযান চালায়। এসময় র্যাবকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় র্যাবও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জায়গাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির একটি আস্তানা। ঘটনাস্থল থেকে চারটি অবিস্ফোরিত হাতে তৈরি গ্রেনেড (ইমপ্রোভাইসড এক্সপেল্টাসিভ ডিভাইস-আইইডি) উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। আর জঙ্গিদের বিস্ফোরিত বোমায় র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। জঙ্গিদের কাছে থাকা একটি ব্যাগ থেকে বেশ কিছু বিস্ফোরক, ডেটোনেটরসহ গ্রেনেড তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সড়কের পাশের পরিত্যক্ত ওই জায়গায় জঙ্গিরা সভা করত বলে তাঁদের কাছে খবর ছিল। ঘটনাস্থলে শুধু ওই দুজনই ছিল। তবে তাঁরা নাশকতার পরিকল্পনা করছিল।
তিনি স্বীকার করেন, ২৭ ডিসেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে সাজাভোগ শেষে মুক্তি পাওয়া মাহবুব ও মিনহাজকে তারা আটক করে নিয়েছিলেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের লোকদের কাছে তাদের তুলে দেওয়া হয়।
এদিকে, গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশিদ জানান, গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী ছিলেন জঙ্গি মিনহাজুল ও মাহবুব। রোববার দুপুরে তাঁদের দুজনের জামিন হয়। তারা কারাগার থেকে জামিনে বের হলে র্যাব সদস্যরা ওই দুই জঙ্গিকে হেফাজতে নেন। তিনি জানান, এ বিষয়ে র্যাব তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। র্যাবের গুলির বিষয়টি তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে শুনেছেন।
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার রেজাউল হাসান রেজা জানান, জঙ্গি নিহতের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।