৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
২০ দলীয় জোটের অবরোধ-হরতাল কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতা রোধে ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান শুরু করা হয়েছে৷ সঙ্গে ক্রসফায়ার যুক্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ মানবাধিকার নেতাদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে৷
চলতি সপ্তাহেই সরকার নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে৷ নাশকতাকারীদের দেখামাত্র গুলির সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন সরকারের মন্ত্রীরা৷ আর বৃহস্পতিবার মোটরবাইকে দুইজন চলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ শুধুমাত্র মোটরবাইক চালকই থাকতে পারবেন৷ সঙ্গে সিটের পিছনে আর কাউকে নিতে পারবে না৷৫ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নয়াপল্টনে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে না দেয়ার পরদিন ৬ই জানুয়ারি থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়৷ বৃহস্পতিবার সেই অবরোধের ১৭তম দিন৷ এর মধ্যে হরতালও চলছে মাঝেমধ্যে৷ এখন অবরোধের মধ্যেই চলছে ৪৮ ঘণ্টার টানা হরতাল৷ শুক্রবার ভোর ছয়টায় হরতাল শেষ হবে৷
অবরোধ-হরতালের প্রথম ১৫ দিনে পুলিশের হিসেবে সারা দেশে ৭,০১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ আর সবচেয়ে বেশি গ্রেফতার হয়েছে চট্টগ্রামে ১,৫৯৩ জন৷ এদিকে অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে মোট তিনজন বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন৷ ১৬ই জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, ১৯শে জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলের এজিবি কলোনি ও ২০শে জানুয়ারি খিলগাঁওয়ের জোড়াপুকুর খেলার মাঠের পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনজন নিহত হন৷ নিহতরা বিএনপি এবং জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷
তবে গ্রেফতারের সরকারি হিসাব মানছে না বিএনপি৷ বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান দাবি করেন, ‘‘প্রকৃত গ্রেফতারের সংখ্যা গত ১৭ দিনে পুলিশের হিসাবের চেয়ে তিনগুন হবে৷” তার মতে, ‘‘এই সংখ্যা ২০/২২ হাজারের কম হবে না৷” তিনি দাবি করেন, ‘‘৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের মোট ৮৭ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷” তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সবগুলো কারাগারের মোট ধারণ ক্ষমতা ২৯ হাজার৷ কিন্তু এখন বন্দি আছেন ৯০ হাজার৷ তাদের ৯০ ভাগই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী৷”
আহমেদ আজম খান দাবি করেছেন, ‘‘আন্দোলন দমাতেই তিনজনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে৷ আর এখন নতুন করে গুমের ঘটনা ঘটছে৷ দেখামাত্র গুলি, ধরিয়ে দিলে পুরস্কার এসবের মধ্য দিয়ে সরকার মূলত বিরোধী দলকেই দমন করতে চাইছে৷” তিনি দাবি করেন, ‘‘এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার বাণিজ্যও চালাচ্ছে৷” তাঁর দাবি, ‘‘নাশকতার জন্য দায়ী সরকার, সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এখন মরিয়া হয়ে এ সব কাজ করছে৷”
আর মানবাধিকার নেতা নূর খান বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কন্ট্র্যাক্ট কিলিংয়ের অভিযোগ আছে৷ তাই তারা পরিস্থিতির যে সুযোগ নেবে না তা বলা যায়না৷ সরকার যেভাবে নাশকতা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে৷ নিরীহ মানুষ ক্রসফায়ার, গ্রেফতারসহ নানা হয়রানির শিকার হতে পারেন৷ এরই মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষকে নাশকতার ঘটনায় আটক করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷” তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনো অবস্থায়ই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না৷ আর নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার, দেখামাত্র গুলিসহ আরো যে সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তাতে নাশকতা বন্ধ হবে বলে মনে হয় না৷ বরং এতে বিশৃঙ্খলা বাড়বে এবং নিরীহ মানুষ এর শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে৷”
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার লুত্ফুল কবির সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘আগেও যে ভাবে নাশকতাকারীদের প্রতিরোধ করা হয়েছে, এখনো সেভাবে করা হচ্ছে৷ ল অ্যান্ড অর্ডার রক্ষা ও সিচুয়েশন কন্ট্রোলের জন্য যা করা দরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাই করবে৷”
আর আরেকজন উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান দাবি করেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ ঠিক নয়৷ এটি একটি সাধারণ ও প্রচলিত অভিযোগ৷ সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ নিয়ে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি৷”
মানবাধিকার নেতা নূর খান বলেন, ‘‘নাশকতা বা রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ অবরোধ ও হরতাল আহ্বানকারীরা এর জন্য যেমন দায়ী, সরকারও এর দায় এড়াতে পারে না৷ তাই এসব বন্ধে দুই পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে৷ আর তার জন্য দরকার রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান৷”- ডিডব্লিউ।