৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুটপাতে বা রাস্তায় ভিক্ষুক-ছিন্নমূল দেখামাত্র পুনর্বাসন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কেউই ভিক্ষাবৃত্তি করতে পারবে না। তাদেরকে এই ধরনের নিকৃষ্ট কাজ করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে বিনা সুদে ঋণ দিয়ে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। কারণ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের উন্নতি ছাড়া দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব না।
গতকাল শনিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় সমাজসেবা দিবস ও সমাজসেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ভিক্ষাবৃত্তির মতো অসম্মানজনক পেশা বন্ধ করতে হবে। এতিমদের অর্থ চুরি বা আত্মসাৎ করার জন্য নয় বরং জনগণ ও সমাজের সেবা করার জন্য আমরা সরকারে এসেছি। আমরা এতিমদের কিছু দেয়ার জন্য এসেছি। কারণ আমরা আমাদের বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়েছি। আমি ও শেখ রেহানা ছাড়া আর কেউ এতিম হয়ে এতো কষ্ট পায়নি।
সেবামূলক কর্মকাণ্ডের নামে বিদেশ থেকে এনে আগের সরকার অর্থ আত্মসাৎ করেছে এমন উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অসচ্ছল, পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিক্ষাবৃত্তিটা যেন কোনো কোনো লোকের পেশায় দাঁড়িয়ে গেছে। তাদের আবার সর্দার থাকে। যা পায় তারা আবার ভাগ-বাটোয়ারা করে। যতই পুনর্বাসন করি না কেন, আবার তাদের ফেরত নিয়ে আসে। এটা বন্ধ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনের জন্য আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। বিনা পয়সায় ঘর দিচ্ছি। ট্রেনিং দিচ্ছি, ঋণ দিচ্ছি। তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। ফুটপাতে ও রেলস্টেশনে যারা বসবাস করে ও ঘুমায়, তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করে তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিব যে তারা কোন্ গ্রাম থেকে এসেছে। তাদের যদি কোনো ঘর-বাড়ি না থাকে তাহলে আমরা তাদের জন্য বাড়ি তৈরি করবো। প্রয়োজন হলে আমরা প্রথম ছয় মাস তাদের বিনামূল্যে খাবার দেবো। তিনি আরো বলেন, তারাও মানুষ। তাদেরও উন্নত জীবন-যাপনের অধিকার রয়েছে। তারা কেন ফুটপাতে বা রেলস্টেশনে বসবাস করবে বা ঘুমাবে রাষ্ট্র এ বিষয়ে সকল দায়িত্ব নিবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন মেয়াদে তার সরকার অসচ্ছল, অক্ষম ও সুবিধাবঞ্চিত লোকদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে অক্ষম লোকদের জন্য ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৩৬০ কোটি টাকায় উন্নীত করা, আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এক লাখ লোকের পুনর্বাসন, ১ কোটি ২০ লাখ ভূমিহীন লোকের মধ্যে ৫৫ লাখ একর ভূমি বিতরণ এবং হিজড়া, দলিত ও বেদে সম্প্রদায়ের জন্য দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার অবহেলিত দরিদ্র জনসাধারণের কল্যাণে এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে এবং ইতিমধ্যেই ‘ন্যাশনাল স্যোসাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি পেপার’ অনুমোদন করেছে। বিভিন্ন খাতে সরকারের অসাধারণ সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো ক্ষুধার্ত মানুষ নেই এবং দেশ এখন দারিদ্র্যমুক্ত।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের একটি ‘রোল মডেল’ এবং এ দেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা দেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করবো। এসময় শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো বন্ধে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ব্রেইল বই হস্তান্তর করেন এবং সরকারি শিশু পরিবার থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ প্রাপ্ত মেধাবী ৭ শিক্ষার্থীর মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তরিকুল ইসলাম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নূরুল কবির প্রমুখ।
(সূত্র-ইত্তেফাক।)