৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে। এখনও কোনো পক্ষ সেখানে সমাবেশের অনুমতি পায়নি। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নাশকতার আশঙ্কায় ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাউকেই সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আজ সোমবার পুলিশের পক্ষ থেকে সেই সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে।
এদিকে, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের কথা জানিয়ে মহানগর পুলিশকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তারা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না পেলে তারা পল্টনে সমাবেশ করতে চান। তবে পল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেওয়া বা দেওয়ার ব্যাপারে গত রাত পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত- হয়নি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান না পেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে মূল সমাবেশের আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি পালন করবে এটা স্বাভাবিক। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দেশের নিরাপত্তা নিয়েও ভাবতে হয়। যে কোনো ধরনের নিরাপত্তার আশঙ্কা থাকলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থানেবে। নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা না থাকলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেবে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এদিকে, গতকাল রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ‘ডিএমপির নিউজ পোর্টালের’ তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, নাশকতার আশঙ্কা থাকলে কোনো পক্ষকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। দু’পক্ষই ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে। এ বিষয়ে রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার ও শাহবাগ থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে যদি বলা হয়, সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতা ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, তাহলে কোনো পক্ষকেই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
ডিএমপি কমিশনার জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জননিরাপত্তার বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি তাদের কাছে মনে হয় পরস্পরবিরোধী সমাবেশ একই স্থানে, একই জায়গায়, একই সময়; সেখানে জননিরাপত্তার স্বার্থে কোনোভাবেই তারা সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচি কাউকে করার অনুমতি দিতে পারেন না।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কেউ শান্তি পূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করলে তাতে পুলিশের বাধা দেওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ব্যাপারে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, পল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে বিএনপির চিঠি পেয়েছি। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে শুরু হয়েছিল সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা। একের পর এক পেট্রোল বোমা ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অসুন্তুট হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। নতুন বছরে আবারও দুই দল একই দিনে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যায়িত করে ওই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও একই স্থানে কর্মসূচি পালন করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে কর্মসূচি পালন করতে চায় আওয়ামী লীগ।
পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে একটি গ্রুপ বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে। জামায়াত-শিবির এরই মধ্যে নাশকতার ছক কষে আছে। এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকার একটি বাসা থেকে এক কোটি ৪৭ হাজার টাকাসহ জামায়াত-শিবিরের পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের ঘটনাটি পুলিশকে আরও ভাবিয়ে তুলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ৫ জানুয়ারি ঘিরে নাশকতা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে বনশ্রীর ওই বাসা থেকে টাকা বিতরণ করা হতো। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এত টাকা কেন সংগ্রহে রেখেছেন তার কোনো যৌক্তিক কারণ জামায়াতের পাঁচ নেতাকর্মী দেখাতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
সূত্র বলছে, পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণার পর থেকে রাজধানীতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সন্দেহভাজনদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে পুলিশ। এমনকি অতীতে যারা নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকা সত্ত্বেও ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাদের ব্যাপারেও নতুনভাবে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এমনকি যারা নাশকতার মামলায় জামিনে রয়েছেন, তাদেরও গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।
(সূত্র-সমকাল।)