৫২ আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ঢাকা থেকে পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে প্রত্যাহারের জের ধরে এবার ইসলামাবাদ থেকে বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে ফিরিয়ে নিতে বলেছে পাকিস্তান। কাল বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে তাঁকে পাকিস্তান থেকে প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ফারিনা আরশাদকে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ যেমন পাকিস্তানকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছিল, তেমনি মৌসুমী রহমানকে ফিরিয়ে নিতে ঢাকাকে মৌখিকভাবে বলেছে ইসলামাবাদ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) মৌসুমী রহমানকে সরকার ঢাকায় ফিরিয়ে আনছে না। তাঁকে পর্তুগালে বদলির সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাকিস্তান থেকে সরাসরি লিসবনে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগ দিতে পারেন তিনি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেনকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মৌসুমী রহমানকে নিয়ে সোহরাব হোসেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক) মোহাম্মদ ফয়সালের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় মোহাম্মদ ফয়সাল বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে মৌসুমী রহমানকে ইসলামাবাদ থেকে প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। কিন্তু মৌসুমী রহমানকে বাংলাদেশ কেন ফিরিয়ে নেবে, সে সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক।
জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ফারিনা আরশাদকে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের বলার কয়েক দিন পর গত ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে ইসলামাবাদ প্রত্যাহার করে নেয়। এর এক দিন পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, পাকিস্তান হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব ফারিনা আরশাদকে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ ধারাবাহিকভাবে হেনস্তা করছে। এ ছাড়া গণমাধ্যমেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ধারাবাহিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর পর তাঁকে ঢাকা থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ।
২০১৫ সালে ফারিনাসহ পাকিস্তানের দুই সরকারি কর্মকর্তাকে ঢাকা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে পাকিস্তান। জঙ্গিদের অর্থায়নের অভিযোগে গত বছরের ১২ জানুয়ারি বনানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হাইকমিশনের কনস্যুলার কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহার খানকে। ঢাকার পাকিস্তানের হাইকমিশন মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার পর ৩১ জানুয়ারি তাঁকে ইসলামাবাদে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দণ্ড দেওয়ায় পাকিস্তান ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব এনে সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়েছে। প্রতিবারই পাকিস্তানের এসব তৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির প্রতিবাদে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে গত ২৩ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়েছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে গত ৩০ নভেম্বর ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মৌসুমী রহমানকে তলব করে পাকিস্তান ’৭১-এ গণহত্যার দায় অস্বীকার করে। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যায় দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিচার এবং সাজা প্রশ্নে পাকিস্তানের বিরোধিতার বিষয়ে ঢাকার অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও অমূলক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।
এসব বক্তৃতা-বিবৃতি ও নিন্দা প্রস্তাব এবং তলবের পাল্টা পদক্ষেপ যে দুই দেশের বিদ্যমান ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ জন্য সহায়ক নয়, সেটি বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই বলেছে।
(সূত্র -প্রথম আলো।)