৫২ জাতীয় ডেস্ক।।প্রায় এক বছরের বেশি সময় পর রাজপথে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলো বিএনপি। একই দিনে পৃথক দুটি স্থানে সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। ৫ই জানুয়ারিকে গণতন্ত্র রক্ষা দিবস ও গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যা দিয়ে গত বছর থেকে পালটাপালটি কর্মসূচি পালন করে আসছে দল দুটি। এদিনে কর্মসূচি পালন করাকে কেন্দ্র করে গত বছর সংঘাতময় পরিস্থিতির তৈরি হয়। কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে নিজের কার্যালয়ে অবরদ্ধ হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর টানা তিন মাসেরও বেশি সময় চলা হরতাল-অবরোধে ব্যাপক সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরে কর্মসূচি থেকে সরে এলেও আর রাজপথে প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি দলটির পক্ষ থেকে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকেই নতুন নির্বাচনের দাবি করে আসছে বিএনপি। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন দাবি করে আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বিএনপি ভুল করেছে। আলোচিত এ নির্বাচনের দিনে এবারও পালটাপালটি কর্মসূচির ডাক দেয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য প্রথমে বিএনপি ঘোষণা দেয়। পরে আওয়ামী লীগও একই দিনে একই স্থানে সমাবেশ করার কথা জানায়। এতে রাজনীতিতে কিছুটা উত্তাপ দেখা দেয়। একই স্থানে দুই দল সমাবেশ করার কথা জানানোর পর ঢাকা মহানগর পুলিশ সাংঘর্ষিক কর্মসূচি পালনের অনুমতি না দেয়ার কথা জানায়। পরে বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং রাসেল স্কয়ার এলাকায় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সোমবার শর্তসাপেক্ষে দুদলকেই সমাবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ। সমাবেশ ঘিরে গত কয়েক দিন থেকে নেতাদের পালটাপালটি বক্তব্যে কিছুটা উত্তাপ ছড়ালেও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল কোনো ধরনের সাংঘর্ষিক কর্মসূচিতে যাচ্ছে না তারা। এ বিষয়ে সরকার এবং প্রশাসনের অবস্থাও ছিল অনেকটা নমনীয়। চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে একই দিনে রাজপথে প্রধান দুই দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করায় স্বস্তি এসেছে রাজনৈতিক মহলে। একই সঙ্গে দুই দলের নেতারা তাদের বক্তব্যে পরস্পরকে দোষারোপ করলেও শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়েছেন একে অপরের প্রতি। বিএনপির সমাবেশে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সংলাপ ও আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিরোধী জোটের প্রতি শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে পৃথক স্থানে দুই দলের সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকে রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যাক পুলিশ। সমাবেশ ঘিরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া দিনটি উপলক্ষে সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুই দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচিকে ঘিরেও কোথাও কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গতকাল কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পল্টন থেকে কাকরাইল, ফকিরাপুল, পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলা, গুলিস্তানে ছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। মোড়ে মোড়ে তল্লাশি করা হয়েছে পথচারীদের। কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত দুপুরের পর থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। বিএনপির জনসভাকে ঘিরে মোড়ে মোড়ে ও পল্টন এলাকার বিভিন্ন গলির মুখে ছিল পুলিশের অবস্থান। এসব গলি দিয়ে প্রবেশকারীদের তল্লাশি করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক সদস্য ওই এলাকায় সকাল থেকেই অবস্থান নেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মিছিলের প্রতি সজাগ দৃষ্টি ছিল তাদের। জনসভার আশপাশেও ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান। পুরানা পল্টন, ফকিরাপুল মোড়ের চার পাশে পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নূর হোসেন চত্বরে পুলিশ ও র্যাবের একটি টহল দল মোতায়েন ছিল সকাল থেকেই। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে এজন্য ওই এলাকায় বিশেষ নজরদারি ছিল। সমাবেশ এলাকাসংলগ্ন কাকরাইল, ফকিরাপুল, পুরানা পল্টন মোড়ে রায়ট ও এপিসি কার রাখা হয়েছিল। গুলিস্তানে, নবাবপুর রোডে ছিল র্যাব ও পুলিশের অবস্থান। আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রবেশকালে সন্দেজনক ব্যক্তিদের তল্লাশি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিকে ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায়ও ছিল কড়া নিরাপত্তা বলয়।
সকাল থেকে বিএনপির অফিসের সামনে দিয়ে রাস্তায় গাড়ি চলাচল শুরু করলেও তা দুপুর সাড়ে ১২টায় বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন জাসাসের শিল্পীরা মঞ্চে গান পরিবেশন করছিলেন। ফকিরাপুলের গাড়িগুলো আরামবাগের রাস্তা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ফকিরাপুলে কাঁটাতারের ব্যারিকেডের পাশাপাশি কাকরাইল মোড়েও কাঁটাতারের ব্যারিকেড দেয়া হয়। দুই স্থানে দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন ছিল। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যারিকেডটির সামনে সারি সারি হয়ে পুলিশ অবস্থান করছে। সন্দেহভাজনদের ব্যাগ তল্লাশি ছাড়াও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ফকিরাপুলে মেটাল ডিরেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করতে দেখা গেছে। নারী পুলিশ সদস্যদের সমাবেশে আসা নারীদের ব্যাগ তল্লাশি করতে দেখা গেছে। মঞ্চের সামনের দ্বিতীয় রাস্তার পেছনে চার প্লাটুন পুলিশ সতর্ক অবস্থায় ছিল। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। মঞ্চের আশপাশের ভবনগুলোতে সকাল থেকে পুলিশের সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। সমাবেশে র্যাবের কোনো সদস্যকে দেখা না গেলেও ফরিকরাপুর এলাকায় দুটি র্যাবের গাড়িকে টহলরত অবস্থায় দেখা গেছে।
বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ির বহর যখন নয়াপল্টনে প্রবেশ করে তখন পুলিশকে আরও সতর্ক অবস্থায় দেখা যায়। ওই গাড়ির বহরের সঙ্গে একটি পুলিশের গাড়ি ছিল। পুলিশ ওই গাড়িটি এস্কট করে মঞ্চ পর্যন্ত নিয়ে যায়।
নিরাপত্তার বিষয়ে মতিঝিল জোনের পুলিশের ডিসি সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শর্তসাপেক্ষে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়। সমাবেশকে ঘিরে যেন কোনো নাশকতা না হয় এজন্য পুলিশ বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল।
(সূত্র-মানবজমিন।)