৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিকল্প চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ। এমন খবরে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ভাটা পড়েছে কমিশনের। আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদপূর্তির কারণে মার্চের মধ্যে অন্তত এক হাজারের মতো ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করতেই হচ্ছে। তার আগেই ইসিকে সংশোধন করতে হবে ইউপি নির্বাচন পরিচালনা ও আচরণবিধি।
তবে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, দলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি দলভিত্তিক ইউপি নির্বাচনের পক্ষে নন। এ নিয়ে আগামীকাল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কার্যনির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্য। এদিকে নির্বাচন কমিশনের দু’জন সদস্য জানিয়েছেন,
সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এমন আভাস তারাও পেয়েছেন। তবে ইসি চাইছে, সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন, তা যেন দ্রুত নেওয়া হয়।২২ নভেম্বর সংসদে ইউনিয়ন পরিষদ আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। সরকার এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে চাইলে আবারও সংসদে আইন পাস করতে হবে। ২০ জানুযারি সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেন, দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনার আগে এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়। এ নিয়ে বিকল্প চিন্তা উপস্থাপনার আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে তিনি মনে করেন, ইউপি আইন সংসদে যেভাবে পাস হয়েছে সে নিরিখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারে ইসি।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২২ নভেম্বর সংসদে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) বিল-২০১৫ পাস হয়েছে। তার আলোকে আচরণবিধি ও নির্বাচন পরিচালনাবিধির খসড়া কমিশনের বিবেচনার জন্য দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। পৌরসভার মতোই শুধু চেয়ারম্যান পদে ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। তবে সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্যপদে আগের মতোই নির্দলীয় নির্বাচন হবে।
ইসি কর্মকর্তাদের মতে, সরকার নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করতে চাইলে আগেভাগেই করা উচিত। কেননা, পৌরসভা নির্বাচনের আগমুহূর্তে আইন সংশোধন হওয়ার ফলে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভোগান্তি- পোহাতে হয়েছে তাদের। বিশেষ করে নারী কাউন্সিলরদের জন্য সংরক্ষিত প্রতীক পরিবর্তনে কমিশনের সিদ্ধান্ত থাকলেও তাড়াহুড়োর কারণে বিধিমালায় এসব অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে বিভিন্ন মহলের বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়েছিল কমিশন।
ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুুল মোবারক বলেন, পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান পদে দলভিত্তিক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিধান চালু করতে আইন সংশোধন করা হয়েছে। তাই এ নির্বাচন করতে আচরণ ও পরিচালনাবিধি সংশোধন করতে হবে। প্রস্তুতির কাজ প্রক্রিয়াধীন জানিয়ে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত ফাইল কমিশন এখন বিবেচনা করছে।
ইসি সূত্র আরও জানিয়েছে, ইউপি নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন উপযোগী চার হাজার ৫৪৪টি ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ধাপে ধাপে নির্বাচনের জন্য তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে হিসাবে জুনের মধ্যে সব ইউপিতে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে প্রায় এক হাজার ইউপি নির্বাচন না করলে মেয়াদপূর্তির কারণে এসব পরিষদ শূন্য হয়ে যাবে।
প্রচারে থাকছেন না মন্ত্রী-এমপিরা
পৌর নির্বাচনের মতোই ইউপি নির্বাচনের প্রচারেও মন্ত্রী-এমপিদের বাইরে রাখা হচ্ছে। সংশোধিত আচরণবিধি ও পরিচালনাবিধির খসড়ায় এ প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারকার্যের বাইরে রাখার পাশাপাশি মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের লিখিত নির্দেশে নারী প্রার্থীদের জন্য নতুন করে ১০টি প্রতীক সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের কার্যক্রম, দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়ার বিধান, প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ, নির্বাচনী ব্যয় ও উৎসের বিবরণীর ক্ষেত্রে নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
(সূত্র-সমকাল।)