৫২ মফস্কল ডেস্ক।।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে মাত্র চার ঘণ্টার ব্যবধানে আট ‘সিরিজ’ দুর্ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক সংঘটিত এসব দুর্ঘটনায় ভূমিমন্ত্রীর পুত্রসহ ৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো শতাধিক, যার মধ্যে ভূমিমন্ত্রীর পুত্রবধূও আছেন। অপরদিকে, সারাদেশে আরো ৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় আরো ১০ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে।
ঘন কুয়াশা ও বঙ্গবন্ধু সেতুতে স্থাপিত লাইটিং বাল্বগুলো বন্ধ থাকার ফলে সেতুর উপর পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় গতকাল শনিবার ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের পুত্র শরীফ রানা (৩৯) সহ ৭ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া এসব ঘটনায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে।
গতকাল বঙ্গবন্ধু সেতুর মাঝামাঝি এলাকায় পৃথক পৃথক স্থানে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার ফলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল প্রায় সাত ঘণ্টা বন্ধ থাকে। দুপুর একটার পর সেতুর উপর থেকে দুর্ঘটনা কবলিত পরিবহনগুলো সরিয়ে নেয়া হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। নিহতদের মধ্যে ভূমিমন্ত্রীর পুত্র ছাড়া ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন, সিরাজগঞ্জের কোনাবাড়ী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (৩৩), ক্ষতিগ্রস্ত আবু তালহা পরিবহনের সুপারভাইজার রাসেল (৪০), পাবনার সাথিয়া উপজেলার এব্রাবপুর গ্রামের মোনতাজ আলীর ছেলে নুর আমীন (২০) ও একই জেলার সুজানগর উপজেলার মধপুর গ্রামের হাসমত আলীর ছেলে সোহেল রানা (৩০)।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে স্থাপিত সোডিয়াম লাইটগুলো বন্ধ থাকায় ও ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে একটি গাড়ি অপর একটি গাড়িকে ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রথম দুর্ঘটনার পর আরো কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর সেতুর দু’পারে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় পড়া পরিবহনগুলো উদ্ধারে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের সিরাজগঞ্জের তিন ইউনিট ও টাঙ্গাইলের দুটি ইউনিটসহ সেতু কর্তৃপক্ষের লোকজন অংশ নেন।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখেরুজ্জামামন জানান, পাবনা থেকে ঢাকাগামী সরকার পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস সেতুর উপর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ৩৯ নম্বর পিলারের নিকট কাঠভর্তি একটি ট্রাককে সজোরে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই ঐ বাসের যাত্রী ৪ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় অন্তত ৩০ জন। এর কিছু সময় পর ধারাবাহিকভাবে আরো কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে, সকাল ৯টার দিকে সেতুর ওপর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী একটি কাঠভর্তি ট্রাককে একটি যাত্রীবাহী বাস পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ওই গাড়ীর সুপারভাইজার নিহত হয়। এ সময় ভূমিমন্ত্রীর ছেলে শরীফ রানা ও তার স্ত্রী সীমা শরিফসহ আহত হয় অনন্ত ২০ জন। তাদেরকে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় টাঙ্গাইল হাসপাতালে মন্ত্রীপুত্র শরীফ ও সিরাজগঞ্জে আরো একজনের মৃত্যু হয়।
ভূমিমন্ত্রীর পুত্র শরীফ রানার মারা যাওয়ার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ঈশ্বরদীতে শোকের ছায়া নেমে আসে। দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার হাজার হাজার মানুষ তার বাড়িতে সমবেত হয়ে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে। মন্ত্রীপুত্র কামরুন্নাহার শরীফ আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। অকালে ছেলের প্রাণহানির খবর শুনে তিনি বারবার সঙ্গাহীন হয়ে পড়েন।
অন্যদিকে, রানার মৃত্যুতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম হীরা ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, শামছুল হক টুকু, আজিজুর রহমান আরজু, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব শফিউল আলম, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উল আলম, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের জয়রামপুর নামক স্থানে ঢাকা গামী দুটি পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই চালক ঘটনাস্থলে নিহত এবং আরো ৪ জন আহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, সকালে দর্শনা থেকে ডিলাক্স পরিবহন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে দামুড়হুদা জয়রামপুর নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে পূর্বাশা পরিবহন এসে সামনা সামনি সংঘর্ষ হয়। এতে পূর্বাশা পরিহনের চালক শান্তি মিয়া (৪৪) এবং ডিলাক্স পরিবহনের চালক দুলাল মিয়া (৪৩) ঘটনাস্থলেই মারা যান।
গতকাল শনিবার পাবনায় ট্রাক ও ব্যাটারী চালিত অটোভ্যান সংঘর্ষে সুইট (২৪) নামে এক যুবক নিহত ও অপর দুইজন আহত হয়েছে। সুইট সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের আজমত আলীর ছেলে। পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় টেবুনিয়া থেকে একটি অটোভ্যান গাছপাড়ার দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে মনোহরপুর নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোভ্যানের চালক ও দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুইটকে মৃত ঘোষণা করেন।
জেলার আক্কেলপুর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক মোটর সাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, নিহত মোটর সাইকেল আরোহী হচ্ছেন ক্ষেতলাল উপজেলার দেওগ্রামের হবিজ উদ্দিনের ছেলে বেলাল হোসেন (৪২) । উপজেলার আওয়ালগাড়ী নামক স্থানে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মোটর সাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেলে মোটর সাইকেল আরোহী বেলাল হোসেন ও জহরুল ইসলাম (২৭) গুরুতর আহত হন। আক্কেলপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বেলালকে মৃত ঘোষণা করেন।
পাঁচবিবি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি-হিলি সড়কে ট্রাকের চাপায় সুমন (২৮) নামের ১ জন মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, পাঁচবিবি-হিলি সড়কের ভীমপুর নামক স্থানে শুক্রবার বিকালে পেছন দিক থেকে একটি ধান বোঝাই ট্রাক সুমনের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। সুমন ট্রাকের নিচে পড়ে গুরুত্বর আহত হয়। পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চালকসহ ট্রাকের হেলপার পালিয়ে গেলেও ট্রাকটি পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
রাজাপুর ঝালকাঠির রাজাপুরে মোটরসাইকেল চাপায় কবির তালুকদার (৫৫) নামে এক পল্লী চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজাপুর-ভান্ডারিয়া সড়কের উপজেলার কানুদাশকাঠি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কবির উপজেলার গালুয়া দুর্গাপুর গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদ তালুকদারের ছেলে ও ওই এলাকার পল্লী চিকিৎসক।
ভালুকা ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের ভালুকা কাঠালী রাসেল মিলের সামনে গতকাল শনিবার বিকালে মাইক্রোবাস চাপায় রোকেয়া বেগম (৫২) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় ওই স্থানে মহাসড়ক পার হতে গেলে ময়মনসিংহ জেলার সদর থানার চুরখাই গ্রামের রোকেয়া বেগমকে একটি মাইক্রোবাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তিনি ভালুকা উপজেলার কাঠালী গ্রামে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন ।
উলিপুর কুড়িগ্রামের উলিপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশু নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কুড়িগ্রাম চিলমারী সড়কের ঢেঁকিয়ারাম রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, মো. আরাফাত (৪) পরিবারের সাথে কুড়িগ্রাম থেকে অটোরিকশা যোগে বাড়ি ফেরার পথে ঢেঁকিয়ারাম রেলগেটে নামলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অটো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরাফাতকে চাপা দিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই শিশুটির মৃত্যু হয়। সে উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের ঢেঁকিয়ারাম গ্রামের রফিকুল ইসলামের পুত্র।
কসবা গতকাল শনিবার সকালে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের মিরপুর নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালকসহ দু’জনের মৃত্যু ঘটেছে। অপরদিকে কায়েমপুর ইউনিয়নের কামালপুর নামক স্থানে মাইক্রোবাসের নিচে চাপা পড়ে এক স্কুলছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে।
জানা যায়, কসবাস্থ সিডিসি স্কুলের শিক্ষিকা ঝরনা বেগমের স্বামী উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের খিরনাল গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে সিএনজি চালক দুলাল মিয়া (৪৫) সকালে কুমিল্লা জেলার পান্নারপুল সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস নিয়ে একজন যাত্রীসহ কসবায় আসার পথে মিরপুর নামক স্থানে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই দুলাল মিয়ার মৃত্যু ঘটে। গুরুতর আহত যাত্রীকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত যাত্রীর পরিচয় পাওয়া যায়নি।