৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীর পর এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে পুলিশ। মারধরের সময় বারবার নিজের পরিচয় দিলেও রক্ষা হয়নি তার। এ সময় পুলিশের এক উপ-পদির্শক (এসআই) তার গলা চেপে ধরেন।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়। গতকাল ভোরে যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীবাগ এলাকার সাবেক কমিশনার নবীউল্লাহর বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত বিকাশ চন্দ্র দাশ (৪৫) ডিসিসি (দক্ষিণ)’র পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালনে বের হয়েছিলেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাথায় ও নাকে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন তিনি। ঘটনার পর থেকে অজ্ঞান রয়েছেন বিকাশ। এ ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্যোগে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন এডিশনাল ডিআইজিকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়।
গতকাল ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলার একটি ওয়ার্ডের শয্যায় রাখা হয়েছে বিকাশ চন্দ্রকে। পাশে ছিলেন তার স্ত্রী সরস্বতী দাশ, স্ত্রীর বড় ভাই চন্দন দাশ ও বিকাশের ছোট ভাই সুজিত কুমার দাশ। সরস্বতী জানান, প্রতিদিনের মতো সিটি করপোরেশনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজ দেখার জন্য ভোর ৪টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জের বাসা থেকে বের হন তিনি। তার পরেই এ ঘটনা ঘটে। বিকাশ যে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন তার সামনে-পেছনে সিটি করপোরেশন লেখা আছে। সেইসঙ্গে মোটরসাইকেলের নম্বরও রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বরাত দিয়ে সরস্বতী ও সুজিত জানান, বিকাশের মোটরসাইকেল দেখে তিন জন সাদা পোশাকধারী পুলিশ তাকে থামতে ইশারা দেন। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আরশাদ হোসেন আকাশ। অন্যদের মধ্যে ছিলেন মনোজ ও রাসেল।
মোটরসাইকেলটি থামাতেই হাতে থাকা রোলার দিয়ে তার মাথা ও নাকে আঘাত করেন আকাশ। আশপাশের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তখন ছুটে যান। সরস্বতী জানান, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তখন চিৎকার করে বলেছে, স্যার মারবেন না। তিনি আমাদের ইন্সপেক্টর স্যার। এমনকি বিকাশ নিজে বারবার বলেছেন, আমি সিটি করপোরেশনে চাকরি করি। আমাকে মারবেন না, প্লিজ। কিন্তু রক্ষা হয়নি তার। পিস্তলের বাঁট দিয়ে মাথায় আঘাত করেন পুলিশ সদস্য। বেদম মারধরে মোটরসাইকেল থেকে নিচে পড়ে যান বিকাশ। একপর্যায়ে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে পায়ের বুট দিয়ে আঘাত করা হয়। আঘাতের একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যান। এ সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ডিসিসি’র দক্ষিণের কর্মকর্তাদের বিষয়টি ফোনে জানান। অল্প সময়ের মধ্যেই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। খবর পেয়ে বিকাশের স্ত্রী সরস্বতী, ভাই সুজিতসহ স্বজনরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সুজিত জানান, তারা গিয়ে দেখতে পান অজ্ঞান অবস্থায় একটি ভ্যানের মধ্যে রাখা হয়েছে তাকে। তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এ সময় যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবনী শঙ্করসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। তাৎক্ষণিকভাবে বিকাশকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের শয্যায় থাকা বিকাশের নাকে তখনও জমাটবাঁধা রক্ত ছিল। একইভাবে মাথায় রক্তের দাগ। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বিকাশের স্ত্রী সরস্বতী। তিনি বলেন, আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার স্বামীতো কোনো অপরাধী না। সরকারি দায়িত্ব পালন করতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর কেন তাকে এভাবে মারধর করা হলো
ঢামেক হাসপাতালে ডা. শফিকুল কবির খানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিকাশ। উন্নত চিকিৎসার জন্য সন্ধ্যায় তাকে ল্যাবএইড-এ স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে ঘটনাকে ভুল বুঝাবুঝি বলে দাবি করেছেন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনী শঙ্কর কর। তিনি বলেন, পুলিশের যে টিমের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে তা ছিনতাই প্রতিরোধ টিম। এটি ধোলাইপাড় এলাকায় রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করার সময় বিকাশকে সন্দেহ হলে থামানোর জন্য সিগন্যাল দেয়া হয়। এ সময় মোটরসাইকেল থামিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন বিকাশ। দৌড়াতে গিয়ে সড়কে পড়ে আহত হন তিনি। ওসি অবনী শঙ্কর বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে সাদা পোশাকে থাকা পুলিশকে ছিনতাইকারী মনে করেই তিনি দৌড়াচ্ছিলেন। অন্যদিকে পুলিশ তাকে ছিনতাইকারী মনে করেছে। ভুল বুঝাবুঝি থেকেই এ ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনা তদন্তের জন্য এডিশনাল ডিআইজি হারুন অর রশীদকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বিকালে এই কমিটি গঠন করা হয়। এতে একজন পুলিশ সুপার ও একজন পরিদর্শক রয়েছেন। তদন্ত করে আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে তাদের। পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল আহসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ই জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে আটক করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদ শিকদার। একপর্যায়ে টাকার জন্য তাকে বেদম প্রহার করা হয়। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগের পর এসআই মাসুদকে প্রত্যাহার করা হয়। বিষয়টি তদন্ত করছেন তেজগাঁও জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তা।