৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল খানকা মোড় এলাকায় একই পরিবারের পাঁচজনকে নৃংশসভাবে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাবুরাইল বেপারিপাড়া এলাকায় ‘আশেক আলী ভিলা’ নামের একটি বাড়ির ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- তাসলিমা আক্তার (৪০) তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), ভাই মোরশেদুল (২৫) এবং তার জা লামিয়া (২৫)।
বাড়ির মালিক ইসমাইল হোসেন আমেরিকা প্রবাসী। তাসলিমার পরিবার বাড়িটির নিচ তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তাসলিমার স্বামীর নাম শফিক, তিনি ঢাকায় গাড়ি চালান। অপর দিকে লামিয়ার স্বামীর নাম শরিফ। তার পেশা সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। পুলিশের ধারণা, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।
চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি জানার পর রাত ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত), সিআইডি, ডিবি ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। খবর পেয়ে জড়ো হয় কয়েকশ উৎসুক মানুষ। রাত ১২টা পর্যন্ত গণমাধ্যমকর্মীদের সেখানে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। তারা বাসার বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। নিহতদের স্বজন ও প্রতিবেশীদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র হাজী ওবায়দুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, পরিবারটি এক মাস আগে ভাড়ায় আসেন। দুইদিন আগে নিহত লামিয়ার স্বামী শরিফ গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে যান। গতকাল রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরে দেখেন তালাবদ্ধ। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় প্রতিবেশী একজনের সহায়তায় তালা ভেঙে ঘরের মধ্যে পাঁচ জনের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে খবর দেয়া হয় থানা পুলিশকে। রাত পৌনে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, দুটি কক্ষে রক্তাক্ত মৃতদেহগুলো পড়ে আছে। প্রত্যেকের গলা কাটা এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একটি কক্ষে দুইই জন নারী ও একজন পুরুষ এবং অপর কক্ষে শিশু দুটির মৃতদেহ দেখতে পেয়েছেন তিনি। তার ধারণা, খানকা শরিফের পাশের বাসায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটলেও এর সঙ্গে ধর্মীয় দ্বন্দ্বের কোনো সম্পর্ক নেই। পারিবারিক দ্বন্দ্বেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।
তিনি আরো জানান, শরিফকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে শরিফ জানান, তাসলিমার স্বামী শফিক ঢাকায় গাড়ি চালান। সপ্তাহের একদিন তিনি ঢাকা থেকে বাসায় আসতেন। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে শরিফ তাকে কিছু জানাতে পারেনি।
নিহত তাসলিমার ননদ হাজেরা বেগম জানান, তাসলিমার স্বামী শফিক ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব চালান। তবে কখন এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানা যাচ্ছে না। অবশ্য খবর শুনে ঢাকা থেকে ছুটে আসা তাসলিমার মা জানান, শনিবার সকাল থেকেই তারা কেউ ফোন ধরছিল না।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মালেক বলেন, ময়নাতদন্তের পরই জানা যাবে ঠিক কখন এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্ট শেষে মর্গে পাঠানো হবে। আলোচিত সাত খুনের রেশ না কাটতেই আরেকটি নৃশংসতার সাক্ষী হলো নারায়ণগঞ্জ।
(সূত্র-ইত্তেফাক।)