৫২ আইন ও আদালত ডেস্ক।।
এ বছরই পাস হতে পারে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৪। ইতোমধ্যে আইনটির চূড়ান্ত খসড়া করা হয়েছে।এ আইনে বলা আছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে অভিভাবক চাইলে ১৬ বছরের কন্যা সন্তানকে বিয়ে দিতে পারবেন।
এ আইনের ফলে বাল্যবিয়ে বাড়বে না কমবে। জানাচ্ছেন মোহাম্মদ ওমর ফারুক শিক্ষা, সচেতনতা বা সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ও গোঁড়ামির কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়ে শিশুর ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। ইউনিসেফসহ শিশু ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে আসে প্রতিবছর। কিন্তু বাল্যবিবাহের হার যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর আরেকটি অন্যতম কারণ অনেক পুরনো বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের সহজ শাস্তির বিধান।
তবে এ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার কমিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করছে মহিলা ও শিশু মন্ত্রনালয়সহ দেশি-বিদেশি সরকারি বেসরকারি সংস্থা। তবে সবচেয়ে আশার বিষয় বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনতে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে বিবাহের সংখ্যা শূন্যে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ১৮ বছরের নিচে বিয়ের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
কিন্তু সরকারের এমন পরিকল্পনা, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৪-এর ফলে পুরো ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিসংখ্যান বলেছে, ১৮-তে পা দেয়ার আগেই দেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। ২০১৪ সালের একটি ইউনিসেফ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। তার মানে, বিদ্যমান আইনে বিয়ের বয়স কমপক্ষে ১৮। কিন্তু বাস্তবে তারও তিন বছর আগেই এ দেশের মেয়েদের বিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। এমন একটি পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয় নারীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য।
বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর অধিকাংশ মেয়েরাই আর স্কুল যেতে পারে না। ফলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয় দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী। শিক্ষিত মায়ের মাধ্যমে শিক্ষিত জাতি গঠনও হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। সেই সাথে নারীর ভবিষ্যৎ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথও রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতায়ন তো অনেক পরের কথা। বাল্যবিবাহের ফলে প্রসূতি ও শিশু মৃত্যু, দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টি নারীর স্বাভাবিক অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা দেয়। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯ সালের পর ১৯৮৪ সালের আইনটির কিছু সংশোধন করা হয়। এর পর ২০১৩ সালে ১৯২৯ সালের আইনটি বাতিল করার প্রস্তাব করে নতুন একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। পরে আবার ২০১৪-তে একটি চূড়ান্ত খসড়া আইন করা হয়। খসড়া আইনে বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য আগের শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দুই বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয় যা খুবই যুগোপযোগী। তবে বিয়ের ন্যূনতম বয়স কমানোর যে খসড়া করা হয়েছে তা বিদ্যমান আইনের সাথে সাংঘর্ষিক।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদ ও দেশের বিদ্যমান শিশু আইনের সাথেও তা সাংঘর্ষিক। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের আইনে ‘প্যারেন্টস কনসেন্ট’ বা অভিভাবকের সম্মতির শর্তে ১৬ বছরের মেয়েদের বিয়ের বিধান আছে। এ ধারণার আলোকেই বাংলাদেশে বিয়ের বয়স শর্ত সাপেক্ষে ১৬ করার চূড়ান্ত খসড়া আইন করা হয়েছে। এই আইনের ফলে দেশে বাল্যবিয়ে অনেক অংশে বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টজনরা।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের আমরা খসড়া করেছি মাত্র। এখন তো তা পাস হয়নি। আর তা ছাড়া সে আইনে কন্যার বিয়ের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছরই তো রাখা হয়েছে। তবে বলা আছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে মা-বাবা চাইলে কন্যাকে তারা বিয়ে দিতে পারবেন। তবে সেটা তো আমরা আইন করে ফেলেনি। বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। তবে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন আমরা এমন কোনো আইন করব না যাতে দেশের কন্যা সন্তানদের ক্ষতি হয় বা বাল্যবিয়ে উৎসাহ পায়।
তিনি বলেন, সরকার বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনতে নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে। আর সেই ধারাবাহিকতায়, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মন্ত্রণালয় দেশের ২১৩টি উপজেলায় তথ্য আপা নিয়োগ প্রদান করবে। প্রত্যেক তথ্য আপাকে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হবে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের বিভিন্ন রকমের সমস্যা শুনবে এবং ইন্টারনেট থেকে ওই সমস্ত সমস্যার সমাধান খুঁজে মহিলাদের তথ্য সরবরাহ করবে।