৫২ অর্থনীতি ডেস্ক।।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় বিনিয়োগ স্বল্পতা। দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগই আশাব্যঞ্জক নয়। এ ক্ষেত্রে অবঠামামো ঘাটতি বড় কারণ। তবে তার চেয়েও বেশি প্রভাব রাখছে আইনি পরিবেশ এবং আইনের শাসনের অভাব। দেশের বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগে চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা করতে পারে না। উপরন্তু নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বিনিয়োগ বাড়াতে স্বচ্ছ এবং সহায়ক আইনি পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
‘বিদেশি বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশের আইনি পরিবেশ’ শীর্ষক এক সভায় গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন বক্তারা। অ্যামেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) রাজধানীর একটি হোটেলে এ সভার আয়োজন করে। সভায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শ ব্লুম বার্নিকাট বলেন, বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে এবং পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আস্থা রাখার মতো স্বচ্ছ এবং আইনি পরিবেশ থাকা খুব প্রয়োজন। এ ধরনের পরিবেশ থাকলে মাার্কিন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আসতে আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশ যেমন মার্কিন বিনিয়োগ চায়, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও এ দেশের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ চায়। যা দুই দেশের অর্থনীতির জন্যই হবে ইতিবাচক।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সরকার বিনিয়োগ চায়। এ জন্য অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। বিনিয়োগে বিদ্যমান সংকট দূর করতে নতুন আইন করছে সরকার। বিনিয়োগ বোর্ড এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এখন তা শুধু সংসদে আইন হিসেবে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রস্তাবিত এ প্রতিষ্ঠানে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে বিনিয়োগের আইনি সমস্যা সমাধান দেয়া হবে। আইনি পরিবেশ সুরক্ষায় কোম্পানি আইনও সংশোধন করা হচ্ছে। এ আইনটিও মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগির নতুন কাস্টমস অ্যাক্ট করা হবে। এ সংক্রান্ত অন্যান্য আইনেরও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। আইনমন্ত্রী বলেন, রানা প্লাজা ধস এবং তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর একটি স্বচ্ছ সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পোশাক খাত এগোচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি ফিরিয়ে দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সভায় সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান বলেন, এফডিআই আকর্ষণে আইনের শাসনের ঘাটতিই এক নম্বর সমস্যা। অবকাঠামো সংকট আরো পরের সমস্যা। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে অন্তত ৪০টি মন্ত্রণালয় এবং সরকাারি প্রতিষ্ঠান জড়িত। ফলে সমন্বয়ের অভাবে বিনিয়োগে পদে পদে বাধা তৈরি হচ্ছে।
অ্যামচেমের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, এ দেশে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আইনি কাঠামোতে সমস্যার কারণে তা হচ্ছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিদ্যমান কিছু আইন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এ বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।