৫২ জাতীয় ডেস্ক।।
যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে অনেক মানুষকে দগ্ধ করার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
রোববার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বর্তমান জবরদখলকারী ভোটারবিহীন সরকার হিংস্র অমানবিকতার যে আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা হলো পুত্রশোকে কাতর বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। কতখানি নিষ্ঠুর ও বিবেকশূন্য হলে একটি সরকার এই জঘন্য অপকর্মটি করতে পারে তা দুনিয়াতে মনে হয় নজীরবিহীন। এই ভোটারবিহীন সরকার মনুষ্যত্বের সকল বৈশিষ্টগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘এই সরকার ও তাদের আন্দোলনের ফসল ১/১১ এর সরকারের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনে প্রায় সাড়ে সাত বছর ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। ২০০৭ সালের মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের দিনই কোকোকে আটক করে। আটকের পর তার ওপর চালানো হয় অমানুষিক অত্যাচার। এই অত্যাচারেই গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত হন আরাফাত রহমান কোকো। এরপর আওয়ামী মহাজোট সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করতে থাকে কোকোর বিরুদ্ধে। মায়ের কাছ থেকে সন্তান ও সন্তানের পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। মানসিক ও শারিরিক নির্যাতনের ফলে অসুস্থতায় ভুগতে ভুগতে গতকাল আরাফাত রহমান কোকো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারকে ধারাবাহিকভাবে ধ্বংস করার একটি মাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে তার বহুদলীয় গণতন্ত্রকে উচ্ছেদ করে এক ব্যক্তির একক রাজত্ব চালিয়ে যাওয়ার পথে বাধা দূর করা।’
তিনি বলেন, ‘কোকোর মৃত্যুতে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ করতে আসাটাকে আমরা ইতিবাচক অর্থেই গ্রহণ করেছিলাম। রাজনীতির বাইরে সামাজিক দায়িত্ববোধের তাগিদেই প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে সমবেদনা জানাতে আসছেন বলে ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় এটা সুস্পষ্ট যে, গতকাল কোকোর মৃত্যুর সংবাদে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি জানাতে আসাটা ছিল নিছকই ছলনা, একটি প্রহসনের মহড়া মাত্র। কোকোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা জানানোটা যেন কুমিরের কান্না।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক বিরোধীদের গভীর শোকের সময়ও তাদের বিরুদ্ধে নিজের অন্তরের বিদ্বেষ-বিষ দূরীভুত করতে পারেননি। বেগম জিয়াকে কারাগারে বন্দী করার নীল নকশা তারা অনেক দিন ধরেই এঁটে আসছে। বেগম জিয়াকে দায়ী করে আটক করার জন্যই একের পর এক পেট্রোল বোমা মেরে নাশকতার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বারবার বলা হয়েছে যে, সরকারি এজেন্টরাই এই নাশকতাগুলো করছে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। সেই উদ্দেশ্যটা হচ্ছে গণবিরোধী ভোটারবিহীন সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেয়া। চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা। আর সেজন্যই বেগম জিয়াসহ নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বেগম জিয়াকে নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, তাকে এবং তার ছেলেদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের, ছেলেদেরকে মায়ের কাছ থেকে দূরে রাখতে বাধ্য করাসহ এমন কোনো উৎপীড়ণের পন্থা নেই যা এই সরকার অবলম্বন করেনি। কিন্তু তারপরও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।’
চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জনগণ এখন রাস্তায় নেমে এসেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের সম্মিলিত শক্তিতে অবরোধ-হরতাল অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে।’
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সরকারকে হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, ‘অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ সব নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, অন্যথায় এই সরকারকে ভয়াবহ পরিণতির জন্য আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।’ তিনি যাত্রাবাড়ীতে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।