৫২ ধর্মিয় ডেস্ক।।
সভ্যতার ক্রম-উন্নতির এ পর্যায়ে এবং মানবিক গুণাবলী বিকাশে ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষার্জন অপরিহার্য। শিক্ষাহীন মানুষকে তুলনা করা হয় অন্ধের সাথে। শিক্ষার্জনের ফলে একশ্রেণির মানুষ যখন সূর্যের মত বিশাল ও তেজদীপ্ত সৃষ্টির স্রষ্টার অসীম ক্ষমতার কাছে মাথা নত করে করুণা প্রার্থনা করে, সেখানে শিক্ষাহীনতার কারণে অপর একশ্রেণির মানুষ সৃষ্টিরাজিরই কোন প্রাণি বা বস্তুকে নিজেদের কল্যাণকারী দাতা হিসেবে মাথায় তুলে জীবন ভিক্ষা করে।
ইসলাম ধর্মে তাই যথার্থই বলা হয়েছে-“বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান”-(আল্-কোরআন; সূরা-যূমার; আয়াত-৯) এ ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থর সর্বপ্রথম অবতীর্ণ পাঁচটি আয়াতের চারটি আয়াতই ছিল শিক্ষা বিষয়ক; যেমন-“পাঠ করুন, আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আর আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।”-( সূরা-আ;লাক্ব; আয়াত-১-৫)
আল্-কোরআনের উল্লিখিত বাণীসমূহ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়-মানুষের যাবতীয় শিক্ষার মূল উৎস স্বয়ং স্রষ্টা। এর আরো প্রমাণ পাওয়া যায় এ বাণীতে-“আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা-বাক্কারাহ; আয়াত-৩১)
এ বাণী থেকে এটাই সাব্যস্ত হয়, সমগ্র সৃষ্টি মণ্ডলীতে মানব জাতিকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদানের লক্ষ্যে স্রষ্টা “শিক্ষা” নামক বিষয়টিকে ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ জ্ঞানার্জনের জন্য প্রার্থনার শিক্ষা দেয়া হয়েছে এভাবে- ‘যে ভগবান অসংখ্য রূপ পরিগ্রহ করে নিখিল জগতের কল্যাণের জন্য চেতন অচেতনাত্মক সর্বত্র পরিভ্রমণ করেন, হে বাচস্পতিদেব, আমি যেন সে ভগবদ্বিষয়ক জ্ঞানলাভে সমর্থ হই। হে জ্ঞানাধিপতি, তুমি প্রকাশমান সত্ত্বগুণের দ্বারা আমাকে উদ্ভাসিত করে আমার মনের সাথে মিলিত হও। হে জ্ঞানরূপ ঐশ্বর্যের অধিপতি, আমার অন্তরে অবস্থান করে আমাকে মেধাসমৃদ্ধি প্রদানে আনন্দিত কর।-(অথর্ববেদ; ১ম কাণ্ড, ১ম অনুবাক; ১ম সূক্ত)। জ্ঞানার্জনের প্রতি গুরুত্ব আরোপপূর্বক এ ধর্মে আরো বলা হয়েছে-‘(অল্পবয়স্ক হলেই যে বালক হয় এমন নয়।) যে ব্যক্তি মূর্খ (সে বয়োধিক হলেও) তাকে বালক বলা যায়। যিনি মন্ত্রের বা বেদশাস্ত্রের অধ্যয়ন করান, তিনিই পিতা হন। পন্ডিতেরা অজ্ঞব্যক্তিকে বালক ও মন্ত্রদাতাকে পিতা বলেন।”-(মনুসংহিতা; ২য় অধ্যায়; শ্লোক-১৫৩)
“যেমন কাঠের তৈরি হাতি ও চামড়ার তৈরি মৃগ অকেজো ও অসার, তেমনি যে ব্রাহ্মণ বেদাধ্যয়ন না করেন তিনিও অপ্রয়োজনীয় অসার; ঐ তিনটি পদার্থ কেবলমাত্র ঐ সমস্ত নাম ধারণ করে (অর্থাৎ নামের যোগ্য প্রয়োজননির্বাহকতা তাদের নেই)।-ঐ;ঐ; শ্লোক-১৫৭)। বৌদ্ধধর্মে জ্ঞানার্জনের নির্দেশ প্রদানপূর্বক এর গুরুত্ব সম্পর্কেও বাণী প্রদান করা হয়েছে; যেমন “জ্ঞানীগণ স্বচালিত; নিন্দা ও সুখ্যাতির মধ্যে তাহারা বিচলিত হন না। ধর্ম কথা শ্রবণ করিয়া তাহারা নির্মল, গভীর, স্নিগ্ধ ও স্থির জলাশয়ের ন্যায় হইয়া থাকেন।” “পুণ্য আমাকে স্পর্শ করিবে না” ইহা মনে করিয়া যেন কেহ পুণ্যকে অবহেলা না করে। বিন্দু বিন্দু বারিপতনে যেমন জলপাত্র পূর্ণ হয়, সেইরূপ জ্ঞানী ব্যক্তি অল্পে অল্পে পুণ্য সঞ্চয় করিয়া পরিণামে পুণ্যময় হইয় থাকেন”-(বুদ্ধবাণী; শিক্ষকবুদ্ধ; ধর্মপদ)।
খ্রিস্টধর্মে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বহু বাণী প্রদান করা হয়েছে; যেমন:-“জ্ঞানবানের শিক্ষা জীবনের উৎস, তাহা মৃত্যুর ফাঁদ হইতে দূরে যাইবার পথ। সুবুদ্ধি অনুগ্রহজনক। যে কেহ সতর্ক, সে জ্ঞানপূর্বক কর্ম করে; কিন্তু হীনবুদ্ধি মূর্খতা বিস্তার করে। জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে”(বাইবেল; হিতোপদেশ; ১৩ঃ১৪,১৫,১৬,২০)। উপর্যুক্ত বাণীসমূহের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, শিক্ষা ছাড়া মানুষ হওয়ার সার্থকতা লাভ কোনভাবেই সম্ভব নয়